ভিত সুদৃঢ় করা আজ অতি জরুরি

samakal_logo
গণতন্ত্র
বদিউল আলম মজুমদার
অনেক বিদেশিই আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। এদের মধ্যে বিশেষজ্ঞ যেমন আছেন, তেমনি আছেন বাংলাদেশ সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদি সতর্ক পর্যবেক্ষক। যেমন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ ল্যারি ডায়মন্ড তার ‘দি স্পিরিট অব ডেমোক্রেসি’ নামক গ্রন্থে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দারুণ হতাশা ব্যক্ত করেছেন। তেমনিভাবে উইলিয়াম মাইলাম, যিনি একসময় বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ছিলেন এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে যার মন্তব্য প্রায়ই শোনা যায়, তার ২০০৯ সালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ অ্যান্ড পাকিস্তান : ফ্ল্যারটিং উইথ ফেইলিউর ইন সাউথ এশিয়া’ (বাংলাদেশ ও পাকিস্তান : দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যর্থতার মুখোমুখি) শিরোনামের গ্রন্থে একই ধরনের মতামত প্রকাশ করেছেন। ‘ফরেন পলিসি’ ম্যাগাজিনের জুলাই-আগস্ট ২০০৯ সংখ্যায় বাংলাদেশকে তাদের ‘ফেইল্ড স্টেট ইনডেক্সে’ বা অকার্যকর রাষ্ট্রের তালিকায় ১৮তম স্থানে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এমন আরও অনেকে আছেন যারা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী নন।
শুধু বিদেশিরাই নন, বাংলাদেশের নাগরিকরা যারা দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে একটু-আধটু ভাবনা-চিন্তা করেন, তারাও আমাদের গণতন্ত্রের স্থিতিশীলতা নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত। দলবাজি, দলীয়করণ, ফায়দাবাজি, টেন্ডারবাজি, লুটপাটতন্ত্র, দখলদারিত্ব, কেন্দ্রীকরণ, এমপিতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র, পক্ষপাতিত্ব, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, শিষ্টের দমন দুষ্টের পালন, সংবিধান লঙ্ঘন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ক্ষমার রাজনীতি, রাজনৈতিক অসহিষুষ্ণতা ও দ্বন্দ্ব ইত্যাদির যে পাগলা ঘোড়ায় আমরা চড়েছি, কেউই নিশ্চিত নয় তা আমাদের কোন গন্তব্যে নিয়ে গিয়ে ঠেকাবে। অতীতে এগুলো আমাদের জন্য সংকটের সৃষ্টি করেছে, আমাদের গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত করেছে এবং আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে খাদে ফেলে দিয়েছে। ভবিষ্যতেও এমন কিংবা তার চেয়ে ভয়াবহ পরিণতির আশঙ্কা কোনোভাবেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
শঙ্কার মূল কারণ হলো, গত ৩৮ বছরেও গণতন্ত্র আমাদের দেশে ‘কনসলিডেটেড’ হয়নি বা দৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড়ায়নি। একটি ইমারতের ভিত নড়বড়ে হলে ঝড়ো হাওয়া যেমন তাকে উড়িয়ে নিয়ে যেতে পারে, তেমনিভাবে গণতান্ত্রিক কাঠামোও শক্ত ভিতের ওপর সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত না হলে তাও ভেঙে পড়তে পারে। আমাদের ইতিহাসে যা অনেকবার ঘটেছে। ঝড়ো হাওয়ার জন্য যে ‘নিম্নচাপে’র প্রয়োজন ছিল তাও সৃষ্টি করেছেন বহুলাংশে রাজনীতিবিদরা তাদের অনেকের অযোগ্যতা, স্বার্থপরতা, অপরিণামদর্শিতা ও অপশাসনের মাধ্যমে। রাজনীতিবিদরা অবশ্য ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের অজুহাত তোলেন; কিন্তু ষড়যন্ত্র হয়ে থাকলে এর জন্যও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন তারাই। তবে আমাদের বহু কষ্টার্জিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে কার্যকর করতে এবং চলমান রাখতে হলে এর ভিত সুদৃঢ় করার কোনো বিকল্প নেই।
গণতন্ত্রকে কনসলিডেটেড করা বলতে আমরা কী বুঝি? গণতন্ত্র কনসলিডেট বা এর ভিত সুদৃঢ় হয় যখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং প্রতিষ্ঠানই একটি রাষ্ট্রে ‘অনলি গেম ইন টাউন’ হয়ে পড়ে; অর্থাৎ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই সব প্রাসঙ্গিক সমস্যার সমাধান করা হয়। অন্যভাবে বলতে গেলে, গণতন্ত্র কনসলিডেটেড হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়, যখন নির্বাচিত সরকারের কার্যক্রমকে অগণতান্ত্রিক পন্থায় বাধাগ্রস্ত করা হয় না এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান (যেমন_ আদালত, নির্বাচন কমিশন, সংসদ ইত্যাদি) ব্যবহার করেই সব রাজনৈতিক বিরোধের সমাধান করা হয়। যেসব দেশে গণতন্ত্র কনসলিডেটেড হয়েছে, সেসব দেশে ধর্মঘট, হরতাল, জ্বালাও-পোড়াওয়ের তথা আন্দোলনের পরিবর্তে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সব সমস্যার সমাধান করা হয়_ সেসব দেশে নিজের নাক কেটে পরের যাত্রা ভঙ্গ করার মতো এসব কার্যক্রমকে নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে তিনজোটের রূপরেখায় এ ধরনের অন্তত তিনটি অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনজোটের রূপরেখায় সুস্পষ্টভাবে অঙ্গীকার ব্যক্ত করা ছিল যে, অনিয়মতান্ত্রিক পন্থায় এবং ‘কোনো অজুহাতেই নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা’ হবে না। একইসঙ্গে নির্বাচনের মাধ্যমে অর্থবহ জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছিল। এছাড়াও ‘স্বৈরাচারের চিহ্নিত সহযোগীদের কোনো দলে স্থান না দেওয়ার অঙ্গীকার’ ঘোষণা করা হয়েছিল। আমাদের সম্মানিত রাজনীতিবিদরা এসব অঙ্গীকারই ভঙ্গ করেছেন, যার মাসুল পরবর্তী সময়ে শুধু তাদের নিজেদেরই নয়, পুরো জাতিকে গুনতে হয়েছে।
গণতন্ত্রকে কনসলিডেটেড করতে হলে মোটাদাগে চারটি জিনিসের প্রয়োজন হবে। এগুলো হলো : ভালো পদ্ধতি, কতগুলো ভালো প্রতিষ্ঠান, কিছু ভালো মানুষ এবং সর্বক্ষেত্রে ভালো আচরণ। এগুলোর যোগসূত্রতা ঘটলেই গণতন্ত্র কার্যকারিতা অর্জনের পথে অগ্রসর হবে এবং ভবিষ্যতে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াবে।
ভালো পদ্ধতি বলতে আমরা সর্বক্ষেত্রে যথাযথ আইন প্রণয়ন, নীতিনির্ধারণ ও সংস্কারের কথা বলছি। যেমন, আমাদের স্থানীয় সরকার আইনগুলোকে যুগোপযোগী করে একটি বলিষ্ঠ বিকেন্দ্রীকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। ফরিদ জাকারিয়া তার ‘ইলি্লবারেল ডেমোক্রেসি’ প্রবন্ধে যথার্থভাবেই বলেছেন, ক্ষমতা, দায়দায়িত্ব ও সম্পদের কেন্দ্রীকরণ গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শত্রু। তেমনিভাবে আরও অনেক ক্ষেত্রে আইনের পরিবর্তন-পরিবর্ধন করতে হবে কিংবা নতুন করে আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে সুদৃঢ় করতে আরও প্রয়োজন কতগুলো শক্তিশালী ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান। যেমন_ জাতীয় সংসদ, নির্বাচন কমিশন, বিচারালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি কর্মকমিশন, মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশন, ন্যায়পালের অফিস ইত্যাদি। এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই যেসব ভালো নিয়মনীতি প্রণীত ও সংস্কার উদ্যোগ গৃহীত হয়, তা বাস্তবায়ন করা হয়। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলোর মাধ্যমেই অন্যায়-অবিচার ও অনিয়মের বিহিত হয়। সংশ্লিষ্ট সবার জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর ও শক্তিশালী হয় যদি এগুলোতে সৎ, যোগ্য এবং সাহসী ব্যক্তিদের নিয়োগ প্রদান করা হয় এবং তারা স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পান।
গণতন্ত্রের ভিত সুদৃঢ় করতে হলে সর্বাধিক প্রয়োজন সর্বস্তরে একদল ভালো মানুষ_ সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত মানুষ। বঙ্গবন্ধুর ভাষায়, সোনার মানুষ। সোনার বাংলা গড়তে হলে অবশ্যই সোনার মানুষ দরকার। ভালো মানুষরাই স্বার্থপরতার উর্ধ্বে উঠে জনকল্যাণমূলক নিয়মনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে পারে। তারাই প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করার পরিবর্তে গড়ে তুলতে পারে। তারা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে। সমাজের সর্বক্ষেত্রে ভালো মানুষ দরকার, তবে সবচেয়ে বেশি দরকার সরকারে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। সিভিল সোসাইটি বা নাগরিক সমাজেও সৎ ও সাহসী ব্যক্তি প্রয়োজন, যারা বিবেকের দ্বারা পরিচালিত হয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে কথা বলবে, জনগণকে সচেতন ও সোচ্চার করবে। যারা ক্ষমতাসীনদের রক্তচক্ষুকে ভয় পাবেন না এবং ফায়দা প্রদানের মাধ্যমে যাদের প্রভাবিত করা যাবে না।
প্রসঙ্গত, নব্বইয়ের এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নাগরিক সমাজ অতুলনীয় অবদান রাখলেও আমাদের নষ্ট রাজনীতির দুষ্ট ছোবলে নাগরিক সমাজের অনেকেই পরবর্তী সময়ে পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়েন, ফলে রাজনৈতিক দলগুলো ‘তিনজোটের রূপরেখা’ বাস্তবায়ন না করে পার পেয়ে যায়। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রাজনৈতিক দলগুলো নব্বইয়ের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র সুদৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড়ানোর পথ সুগম এবং আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাস ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতো।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সুদৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড় করানোর জন্য আরও প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সবার পক্ষে ভালো আচরণ। ভালো মানুষদের কাছ থেকেই সাধারণত ভালো আচরণ আশা করা যায়। তারাই সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেন এবং দুর্নীতি-দুর্র্বৃত্তায়ন ও স্বার্থপরতা থেকে দূরে থাকেন। ভালো আইন ও নিয়মনীতি অবশ্যই ভালো আচরণ করতে ভালো মানুষদের সহায়তা করে। আর ভালো, কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানগুলো সবাইকে সদাচরণ করতে বাধ্য করে এবং তা না করলে আইনানুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা করে।
সর্বক্ষেত্রে ভালো পদ্ধতি, ভালো প্রতিষ্ঠান, ভালো মানুষ এবং ভালো আচরণ নিশ্চিত হলে মানুষের অধিকার নিশ্চিত হয়। তাদের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয় এবং তাদের জন্য সমসুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হয়। ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন কায়েম হয়। আর এসবই সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পূর্বশর্ত। এগুলো নিশ্চিত হলে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানও সম্ভবপর হয়_ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো একটি অনির্বাচিত ও উদ্ভট ব্যবস্থার প্রয়োজন হয় না। ফলে উদারনৈতিক গণতন্ত্র কায়েম হওয়ার, তা সুদৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড়ানোর এবং স্থায়ী হওয়ার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়। এমন গণতন্ত্র যেখানে জনগণের সম্মতির শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাদের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে এবং তাদের জন্য সমতার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
আমরা বাংলাদেশে নির্বাচনসর্বস্ব তথাকথিত গণতন্ত্রচর্চা করে আসছি। নির্বাচনসর্বস্ব গণতন্ত্র ‘একদিনের গণতন্ত্র’। নির্বাচনের পর যদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড় করানোর সুচিন্তিত উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে শুধু নির্বাচনের দিনের সেই আনুষ্ঠানিকতাসর্বস্ব গণতন্ত্র টিকে থাকে না। তা-ই ঘটেছে গোটা পৃথিবীতে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, বিশেষত বার্লিন ওয়াল ভেঙে যাওয়ার এবং সোভিয়েত সাম্রাজ্যের পতনের পর, হান্টিংটনের ভাষায়, গণতন্ত্রের যে ‘তৃতীয় ওয়েভ’ বা তৃতীয় ঢেউ উঠেছিল তা অনেক ক্ষেত্রে স্থায়ী হয়নি। মূলত নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ গণতন্ত্র টিকে থাকেনি। এর অন্যতম কারণ হলো, সেসব দেশে গণতন্ত্রের ভিতকে গভীরে নেওয়ার তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশের আমাদের অভিজ্ঞতাও তা-ই, আমাদের দেশেও নির্বাচনসর্বস্ব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বারবার ভেঙে পড়েছে। এ গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা না নিলে আমাদের আবারও সংকটের মধ্যে পড়তে হবে। আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখা দুরূহ হবে। আমাদের বহু কষ্টার্জিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে হলে নিজেদের এবং অন্যদের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করলে পুরনো ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে, যা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক।
দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমরা অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করিনি। অতীতে দু’দু’বার আমরা গণতান্ত্রিক পথে যাত্রা শুরু করেছিলাম; কিন্তু সে যাত্রা অব্যাহত থাকেনি। স্বাধীনতার পরপর ১৯৭৩ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পত্তন ঘটেছিল; কিন্তু তা টিকে থাকেনি। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী এবং পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের নৃশংস হত্যার পর এর অবসান ঘটে। দ্বিতীয় যাত্রা শুরু হয় ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে। দুটি পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আরও দুটি মোটামুটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার হাতবদল হলেও তাও স্থায়ী হয়নি; বরং তা পরে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ অভিজ্ঞতার আলোকে তাই আজ সবাইকে গণতন্ত্রের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে গণতন্ত্রের ভিত সুদৃঢ় করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে।
তবে গণতন্ত্রকে কনসলিডেটেড করা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। এটি অর্জনের জন্য কোনো ‘শর্টকাট’ বা সহজ পথ নেই। এটি সময়সাপেক্ষ ও অনেকটা কষ্টসাধ্য। এর জন্য প্রয়োজন সুচিন্তিত, প্রজ্ঞাশীল ও সাহসী পদক্ষেপ। এরই মধ্যে আমরা ৩৮ বছর নষ্ট করেছি এবং জাতির অনেক ক্ষতিসাধন করে ফেলেছি। আর আমাদের কালক্ষেপণ করার অবকাশ নেই। কালক্ষেপণ করলে আমরাও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে যেতে পারি, যার পরিণতি আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের ভুগতে হবে।
-ড. বদিউল আলম মজুমদার : সম্পাদক সুজন_সুশাসনের জন্য নাগরিক

সূত্র: দৈনিক সমকাল,  জানুয়ারি ৬, ২০১০

Related Post

নির্বাচন: এই নির্বাচনে মনোনয়ন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণনির্বাচন: এই নির্বাচনে মনোনয়ন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ

বদিউল আলম মজুমদার নির্বাচন গণতান্ত্রিক যাত্রাপথের সূচনা করে। তবে নির্বাচন-পরবর্তীকালে সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক শাসন কায়েম হবে কি হবে না, তা মূলত নির্ভর করে নির্বাচিত সরকারের কার্যক্রমের ওপর। নির্বাচিত সরকার যদি

শাসনতন্ত্র: সংবিধান সংশোধন নিয়ে সংশয়শাসনতন্ত্র: সংবিধান সংশোধন নিয়ে সংশয়

বদিউল আলম মজুমদার | তারিখ: ২০-০৪-২০১১ সংবিধান সংশোধনের লক্ষ্যে সরকার গত জুলাই মাসে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি সংসদীয় বিশেষ কমিটি গঠন করেছে। কমিটির ১২ জন সদস্যই সরকারদলীয়। অন্য সদস্যরাও মহাজোটের অংশীদার।

সুপ্রিম কোর্টের রায়: সংঘাত কি এড়ানো যাবে?সুপ্রিম কোর্টের রায়: সংঘাত কি এড়ানো যাবে?

বদিউল আলম মজুমদার | তারিখ: ২৬-০৯-২০১২ ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া বিভক্ত রায়টি বিতর্কিত। আমাদের আশঙ্কা যে এটি আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে