সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক ড. বদিউল আলম মজুমদার,লেখালেখি রাজনীতি: নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শিক্ষণীয়

রাজনীতি: নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শিক্ষণীয়


বদিউল আলম মজুমদার
গত ২৯ ডিসেম্বর, ২০০৮ তারিখে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে গঠিত চারদলীয় জোটের মহাবিপর্যয় ঘটেছে। সংসদে চারদলীয় জোটের আসনসংখ্যা ২০০১ সালের ২১৪ থেকে (নোয়াখালী-১ আসনসহ) ৩৩টি আসনে নেমে এসেছে। আমাদের হিসাব অনুযায়ী, তাদের অন্তত ১২৯ জন সাবেক সংসদ সদস্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন। অনেক সাবেক মন্ত্রী ও প্রথম সারির নেতা নির্বাচনে পরাজয় বরণ করেছেন। পক্ষান্তরে, মহাবিজয় ঘটেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত মহাজোটের। তারা মোট ২৬২টি আসনে জয়ী হয়েছে। এই জয়-পরাজয়ের খেলায় অবশ্য একটি মহাসুযোগেরও সৃষ্টি হয়েছে উভয় জোট ও জাতির জন্য। এ সুযোগকে আজ কাজে লাগাতে হলে আবেগবিবর্জিত হয়ে অতীতের, বিশেষত সাম্প্রতিক নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
বিএনপি ও তার শরিকরা অবশ্য দাবি করছে, তাদের ভরাডুবির পেছনে রয়েছে ব্যাপক কারচুপি এবং সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্ব। তবে সব দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভয়ভীতিশূন্য পরিবেশে নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তা সত্ত্বেও চারদলীয় জোটের কাছে যদি নির্বাচনে কারচুপির কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকে তাহলে তা প্রকাশ করা উচিত, যার ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত হতে পারে। এ ছাড়া ভোটের দিনের আগে মহাজোটের প্রতি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্বের কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেও চারদলীয় জোটের উচিত, তা জাতির সামনে হাজির করা। তবে এ কথা সত্য, নির্বাচনের আগের রাতে টাকাসহ কিছু ব্যক্তির গ্রেপ্তার, যাদের সিংহভাগই চারদলীয় জোটভুক্ত এবং তা ফলাও করে কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় অনেকের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।
আমরা মনে করি, দোষারোপের সংস্কৃতির ঊর্ধ্বে উঠে চারদলীয় জোটের জন্য আজ সর্বাধিক প্রয়োজন জরুরিভিত্তিতে আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি হওয়া: কেন এ মহাপরাজয়? তারা নিজেরা পরাজয়ের জন্য কতটুকু দায়ী? যথাযথ ডায়াগনোসিসের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় না করা হলে ভুল চিকিৎসার যেমন সম্ভাবনা থেকে যায়, তেমনি চুলচেরা বিশ্লেষণের ভিত্তিতে নির্বাচনে পরাজয়ের কারণ নির্ণয় না করলে দল ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারে, যার মাশুল পরে তাদের গুনতে হবে। এ ছাড়া ডায়াগনোসিসের আগে রোগীকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে, তিনি রোগাক্রান্ত। একইভাবে চারদলীয় জোটের প্রধান শরিক হিসেবে বিএনপিকেও আজ অনুধাবন করতে হবে যে, তাদের নিজেদের গুরুতর ভুলভ্রান্তি ছিল−তাহলেই তারা এগুলো শুধরিয়ে দলকে পুনর্গঠন করতে পারবে। উপরনতু ?স্কেপগোট? বা ?নন্দ ঘোষ? খুঁজলে ও শুধু অন্যকে দোষারোপ করলে অবস্থার পরিবর্তনের জন্য তাদের নিজেদের কিছু করার থাকবে না, ফলে দলের পুনর্গঠন ব্যাহত হবে। তবে বিএনপির পুনর্গঠন ও একটি শক্তিশালী জনকল্যাণমুখী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি।
অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে প্রথমেই গত চারটি সংসদ নির্বাচনের ফলাফলের দিকে দৃষ্টি দেওয়া দরকার। অনেকেরই স্মরণ আছে, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি এককভাবে ১৪০টি আসন পায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬টি, অর্থাৎ ১৯৯১ সালের বিএনপির তুলনায় আরও বেশিসংখ্যক আসন লাভ করে। ২০০১ সালে বিএনপি এককভাবে ১৯৩টি এবং চারদলীয় জোট সমবেতভাবে ২১২টি আসনে জয়ী হয়। সাম্প্রতিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবেই দুই-তৃতীয়াংশের বেশি (২৩০টি) আসনে জয়ী হয় এবং মহাজোটের আসনসংখ্যা দাঁড়ায় ২৬২টি। এটি সুস্পষ্ট যে, গত তিনটি নির্বাচনে সরকারি দল পরাজিত হয়েছে এবং বিরোধী দল ক্রমাগতভাবে আরও বেশি আসন নিয়ে জয়লাভ করেছে। অর্থাৎ ভোটাররা ক্ষমতাসীনদের জোর থেকে আরও জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে; আশায় বুক বেঁধে বিরোধীদের প্রতি আস্থা প্রদর্শন করেছে এবং ক্ষমতায় বসিয়েছে।
স্মরণ করা প্রয়োজন, তিনদলীয় জোটের রূপরেখার ভিত্তিতে সৃষ্ট নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের ফলে জেনারেল এরশাদ পদত্যাগ করেন এবং ব্যাপক আশা-আকাঙ্ক্ষার মধ্য দিয়ে ১৯৯১ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিনতু ক্ষমতায় গিয়ে বিএনপি সরকার সংসদীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন ছাড়া জোটের রূপরেখায় অন্তর্ভুক্ত অন্য সব অঙ্গীকার বাস্তবায়নের প্রতি চরম উদাসীনতা প্রদর্শন করে। এ ছাড়া মাগুরার উপনির্বাচনে কারচুপিসহ আরও কিছু গুরুতর অভিযোগ বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়। ফলে ভোটাররা বিএনপিকে ১৯৯১ সালের তুলনায় কম আসন দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করে।
১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারও নব্বইয়ের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দলীয়করণ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ ওঠে। তাদের শাসনামলে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত জাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়। এসব অভিযোগের প্রতি ভ্রক্ষেপ না করেই আওয়ামী লীগ ২০০১ সালের নির্বাচনে অনেক চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীকে মনোনয়ন দেয়, ফলে নির্বাচনে তাদের চরম ভরাডুবি হয়।
২০০১ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে এবং নির্বাচন-পরবর্তী ১০০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণাকালে চারদলীয় জোট তথা বিএনপি সরকার সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে। কিনতু বাস্তবে জোট সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশ দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন ও উগ্রবাদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। দলবাজি-ফায়দাবাজি সর্বস্তরে বিস্তার লাভ করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিজ সন্তানদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি এবং ক্ষমতার বিকল্প কেন্দ্র সৃষ্টির মাধ্যমে অনেক বাড়াবাড়ির অভিযোগ ওঠে। পক্ষপাতদুষ্ট একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারিতে একটি পাতানো নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন গণপ্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। এ সবকিছুই উপেক্ষা করে চারদলীয় জোট ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের জন্য সন্ত্রাসের গডফাদার, দুর্নীতিবাজ ও যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত ও দুর্নামগ্রস্ত ব্যক্তিদের গণহারে মনোনয়ন দেয়। এমনকি দুজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয় যাঁরা হত্যার অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এবং রাষ্ট্রপতির অনুকম্পায় কারামুক্ত। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা প্রার্থীদের হলফনামায় প্রাপ্ত তথ্য থেকেই এটি সুস্পষ্ট, মনোনয়নের ক্ষেত্রে বিএনপি অনেকটা স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দিয়েছে। যেসব ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তাঁদের অনেকে মনোনয়ন পাওয়া তো দূরের কথা, বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হওয়ারও যোগ্যতা রাখে না। কারণ বিএনপির গঠনতন্ত্রের ধারা-৪(খ)(২) অনুযায়ী, সমাজবিরোধী ও গণবিরোধী ব্যক্তিদের দলের সদস্যপদ দেওয়া যায় না। পক্ষান্তরে, প্রতিপক্ষ মহাজোট অনেক বেশিসংখ্যক নতুন মুখকে মনোনয়ন দিয়েছে, যাঁদের অপেক্ষাকৃত বেশি পরিচ্ছন্ন ইমেজ রয়েছে।
নির্বাচনে নেতিবাচক প্রচারণা বিএনপির ভরাডুবির আরেকটি কারণ বলে আমাদের ধারণা। ?দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও?−বিএনপির এ স্লোগান অনেকের মনে প্রশ্ন তুলেছে: দেশকে কিসের হাত থেকে বাঁচাবে? দেশের সার্বভৌমত্ব কি হুমকির মুখে? কারা এ হুমকির কারণ? এ স্লোগান থেকে কারও কারও কাছে মনে হয়েছে, বিএনপি প্রতিপক্ষের দেশপ্রেম সম্পর্কে সন্দেহের সস্তা আবেগ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। আবার অনেককে বলতে শোনা গেছে, দেশকে বাঁচাতে হবে দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন, দলবাজি, ফায়দাবাজি ও স্বার্থপরতা থেকে। তাই বিএনপির স্লোগান নিজের বিরুদ্ধেই কাজ করেছে বলে অনেকের বিশ্বাস। অন্যদিকে মহাজোট ভোটারদের দিনবদলের স্বপ্ন দেখিয়েছে, যা অনেকের মধ্যে আশা-ভরসার সঞ্চার করেছে।
উল্লেখ্য, ?সুজন−সুশাসনের জন্য নাগরিক?-এর মতো সংগঠন এবং গণমাধ্যমের ব্যাপক প্রচারণার ফলে গত দুই বছরে আমাদের রাজনীতির মানে পরিবর্তনের পক্ষে একটি ব্যাপক জনমত সৃষ্টি হয়। এমনি প্রেক্ষাপটে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে চারদলীয় জোটের দায়িত্বহীনতা ভোটারদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে দারুণভাবে ক্ষুব্ধ করেছে। তাদের অনেককে বলতে শোনা গেছে, দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়নের অভিযোগে অভিযুক্ত ও দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ভোট দেওয়া তাঁদের অতীত কর্মকাণ্ডকে সমর্থনেরই সমতুল্য হবে এবং এসব ব্যক্তি ক্ষমতায় ফিরে এলে তাঁরা আরও বেপরোয়া হয়ে পড়বে এবং অপকর্মের সব সীমা লঙ্ঘন করবে। তাই এক অর্থে ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচন ছিল জোট সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে একটি রেফারেন্ডাম বা গণভোট সমতুল্য। এ গণভোটে চারদলীয় জোটের পরাজয় ছিল অবশ্যম্ভাবী। নির্বাচনী ফলাফল ছিল বহুলাংশে চারদলীয় জোটের বিরুদ্ধে ?না? ভোট দেওয়ার শামিল। অনেক ভোটারই এমনকি বিতর্কিত, মহাজোট প্রার্থীকে সমর্থন করেছে শুধু চারদলীয় জোটকে ঠেকানোর ও ক্ষমতা থেকে বিরত রাখার জন্য।
যে তিনটি আসনে বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, তার ফলাফলের দিকে তাকালেও ভোটারদের বিএনপির প্রতি অসন্তোষের প্রমাণ পাওয়া যায়। ২০০১ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়া বগুড়া-৬, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১ আসনে, যেখানে ৭৯ থেকে ৭২ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন, সেখানে সাম্প্রতিক নির্বাচনে তাঁর ভোটের হার কমে এসেছে ৭১ থেকে ৬৫ শতাংশে। এমনকি সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমানের জন্নস্থান গাবতলীতে (বগুড়া-৭) এবার একজন অপেক্ষাকৃত অপরিচিত প্রার্থী লাঙল প্রতীক নিয়ে প্রায় ৯৩ হাজার ভোট পান।
বস্তুত নির্বাচনের আগে চারদলীয় জোটের পরাজয় ও মহাজোটের বিজয় সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা দুরূহ ছিল না, বিশেষত গত আগস্ট মাসে অনুষ্ঠিত চারটি সিটি করপোরেশন ও নয়টি পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফলের আলোকে। ওই সব নির্বাচনে এককভাবে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হয়েছিল−তারা ১৩টি মেয়র পদের মধ্যে ১২টিতে জয়লাভ করে। তাই বিএনপি যে গত কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে জনসমর্থন হারিয়েছে তা সহজেই অনুধাবন করা যায়। এ ছাড়া ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিজস্ব ভোটব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের সমর্থন।
এ কথা অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই যে বিএনপি একটি বড় দল। শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক নির্বাচনে বিএনপি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভোটারের সমর্থন পেয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এ জনসমর্থনকে কাজে লাগিয়ে দলকে এখন পুনর্গঠন করতে হলে অতীতের অভিজ্ঞতা গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিতে হবে এবং বিতর্কিত নয়, এমন ব্যক্তিদের ভবিষ্যতের দায়িত্ব দিতে হবে। দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বাদ দিতে হবে। দুর্নামগ্রস্ত এবং অভিযুক্তদের দলের নেতৃত্ব থেকে দূরে রাখতে হবে। তা না হলে আমাদের আশঙ্কা, দুর্বৃত্ত ও দুর্নীতিবাজদের দল হিসেবে বিএনপির বিরাজমান ইমেজ দূরীভূত হবে না। আমরা মনে করি, দলকে কলুষমুক্ত ও জনকল্যাণমুখী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার এখন একটি অপূর্ব সুযোগ। আরও সুযোগ দলকে পেশাদারির ভিত্তিতে পুনর্গঠনের। এ জন্য অবশ্য প্রয়োজন হবে নেতা-নেত্রীদের ক্রোধের পরিবর্তে বোধশক্তিকে কাজে লাগানো।
অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে ক্ষমতাসীনদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় রয়েছে। গত চারটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশের ভোটাররা বিশ্বাস ভঙ্গের জন্য ক্ষমতাসীনদের ক্ষমা করেনি−তারা ক্রমাগতভাবে আরও জোরালো কণ্ঠে ?না? বলেছে। তারা অঙ্গীকার বরখেলাপকারীদের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নিয়েছে। তাই অতীত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি এড়াতে হলে মহাজোট সরকারকে ?ডেলিভার? বা তাদের অঙ্গীকার পরিপূর্ণভাবে রক্ষা করতে হবে। দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনের পরিবর্তে অপরাধতন্ত্র ও লুটপাটতন্ত্র যাতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্বাচনসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সংকীর্ণ দলীয় আনুগত্যের বিবেচনার ঊর্ধ্বে উঠে যোগ্যতা ও দক্ষতার দিকে নজর দিতে হবে−তাহলেই দলমত-নির্বিশেষে সব নাগরিকের সরকার প্রতিষ্ঠার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার বাস্তবে রূপ নেবে। নতুন সরকারের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা যেকোনো কর্মসূচি গ্রহণ এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সাধনের জন্য একটি অপূর্ব সুযোগেরও সৃষ্টি করেছে। আশা করি, তারা এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করবে, কারণ ভবিষ্যতে তাদের অজুহাত দেখানোর কোনো অবকাশ থাকবে না। ক্ষমতাসীনদের সফলতা অবশ্য জাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যও একটি সম্ভাবনার দ্বার উন্নোচিত করবে, যা এ মুহূর্তে সবারই কাম্য।
ড. বদিউল আলম মজুমদার: সম্পাদক, সুজন−সুশাসনের জন্য নাগরিক।
তথ্য সূত্র: প্রথম আলো, ১৭ জানুয়ারি ২০০৯

Related Post

নির্বাচন: এই নির্বাচনে মনোনয়ন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণনির্বাচন: এই নির্বাচনে মনোনয়ন ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ

বদিউল আলম মজুমদার নির্বাচন গণতান্ত্রিক যাত্রাপথের সূচনা করে। তবে নির্বাচন-পরবর্তীকালে সত্যিকার অর্থেই গণতান্ত্রিক শাসন কায়েম হবে কি হবে না, তা মূলত নির্ভর করে নির্বাচিত সরকারের কার্যক্রমের ওপর। নির্বাচিত সরকার যদি

বদিউল আলমের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা: স্থানীয় সরকারকে বিকেন্দ্রীকরণের পরিবর্তে কেন্দ্রীভূত করা হচ্ছেবদিউল আলমের বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা: স্থানীয় সরকারকে বিকেন্দ্রীকরণের পরিবর্তে কেন্দ্রীভূত করা হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক উন্নত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো যখন বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের ক্ষমতা বাড়াচ্ছে, তখন এ দেশের কেন্দ্রীয় সরকার উল্টো পথে হাঁটছে। তারা স্থানীয় সরকারকে কেন্দ্রীভূত করে ক্রমাগত এর ওপর চেপে বসছে।

অবৈধ ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচঅবৈধ ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ

বদিউল আলম মজুমদার | তারিখ: ১৪-০৮-২০১০ গত ২১ জুলাই জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ধারা-২৬৬-এর অধীনে সরকার সংবিধান সংশোধনের উদ্দেশ্যে সংসদের উপনেতা সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি ‘সংসদীয় বিশেষ কমিটি’