সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক সংবাদ সম্মেলন ‘সংলাপ ও সমঝোতা আজ জরুরি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

‘সংলাপ ও সমঝোতা আজ জরুরি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত


Shujan_conf_10.01.15বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক দলসমূহকে অবিলম্বে সংলাপে বসার জন্য স্বনির্বন্ধ অনুরোধ জানিয়েছেন সুজন নেতৃবৃন্দ। আজ (১০ জানুয়ারি, ২০১৫) দুপুর ১২.০০টায় রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সুজন নেতৃবৃন্দ এ অনুরোধ জানান। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যদি দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দেন এবং সমস্যা সমাধানের জন্য এগিয়ে না আসেন, তাহলে  মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে একটি অর্থবহ সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার জন্যও অনুরোধ জানান সুজন নেতৃবৃন্দ।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজন নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ ও সুজন কেন্দ্রীয় প্রধান সমন্বয়কারী জনাব দিলীপ কুমার সরকার।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘোষণার কারণে অস্থির হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। সহিংসতা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক সহিংসতায় নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নোয়াখালী ও লক্ষীপুরে ৯ জন নিহত হয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ক্রমে বেড়েই চলেছে। বুধবার দিবাগত রাতে রেললাইনের ফিশপ্লেট খুলে ফেলার কারণে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে ৫০ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। একই কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল জয়পুরহাটেও। ৪ জানুয়ারি থেকে দেশজুড়ে মানুষ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। জরুরি প্রয়োজনেও তারা যেতে পারছে না এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায়। এ যেন এক অসহনীয় অবস্থা, যা ৫ জানুয়ারি ২০১৪-এর পূর্ববর্তী সহিংসতাপূর্ণ পরিস্থিতির কথাই আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা নাগরিকরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা শঙ্কিত সামনের দিনগুলোর কথা ভেবেও, কারণ এ অবস্থা চলতে থাকলে আমরা একটি অকার্যকর রাষ্ট্র, এমনকি গৃহযুদ্ধের দিকেও ধাবিত হতে পারি।

তিনি বলেন, আমরা সুজন-এর পক্ষ থেকে সহিংসতা ও সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। একইসঙ্গে দাবি জানাই অবিলম্বে এগুলো বন্ধ করার। আমরা আরও দাবি জানাই, যারাই সহিংস ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত তাদেরকে যেন খুঁজে বের করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হয়।

তিনি আরো বলেন, আমরা মনে করি যে, ৫ জানুয়ারি, ২০১৪ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে এক অস্বাভাবিক, অস্বস্তিকর ও সম্ভাব্য অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বিগত কয়েক দিনের হানাহানি ও সংঘাত এ অস্থিতিশীলতারই বাস্তব প্রতিফলন। এ সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া জরুরি। তা না হলে আমরা এক চরম সংঘাতময় অনাকাঙ্ক্ষিত ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত হতে পারি। কিন্তু এই মুহুর্তে একটি নির্বাচন, এমনকি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনই আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়। আমরা মনে করি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে, ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা এড়াতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর এবং অন্যান্য স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের সংলাপে বসা ও কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমঝোতায় আসা অত্যন্ত জরুরি। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য সংলাপ ও সমঝোতায় পৌঁছানোও আজ জরুরি। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে সংলাপের বসার জন্য আমরা সুজন-এর পক্ষ থেকে স্বনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই। এ লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকেই প্রাথমিক পদক্ষেপ নিতে হবে বলে আমরা মনে করি। তবে, অন্যান্য স্বার্থ সংশ্লিষ্টদেরও সম্পৃক্ত করা জরুরি। কিন্তু আমরা অতীতের ন্যায় ‘সংলাপ-সংলাপ খেলা’ দেখতে চাই না। আমরা চাই আন্তরিকতাপূর্ণ আলোচনা, ছাড় দেওয়ার মানসিকতা ও টেকসই সমাধান।

আমরা আশা করি যে, আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বিরাজমান সংকটের টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন, সংলাপে নিয়োজিত হবেন, সমঝোতায় উপনীত হবেন এবং একটি জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করবেন। একইসঙ্গে তাঁরা বহুদলীয় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের আলোকে পরস্পরের সঙ্গে সহাবস্থানের ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করবেন।

ড. তোফায়েল আহমদ বলেন, দেশের এই পরিসি’তিতে নাগরিক সমাজ নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে। সবার মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। এটি একটি বিরাট সংকট। এই সময় বর্ষীয়ান নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সমাজে এখন সবকিছু মানিয়ে নেবার সংস্কৃতি তৈরি  হয়েছে। এ থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে। পৃথিবীর যে যে প্রান্তে গৃহযুদ্ধ হয়েছে সেখানেই দেখা গেছে সরকারের কর্তৃত্ববাদী মানসিকতা। আমাদের অন্ধাকারের দিকে যাত্র শুরু হয়েছে, এর দ্রুত কোন সমাধান আমাদের জানা নেই। এই পরিস্থিতিতে নাগরিক হিসেবে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

Related Post

সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বানে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিতসুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বানে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

‘স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্বাচন রাজনৈতিক দলভিত্তিক হওয়া উচিত নয়। রাজনৈতিক দলভিত্তিক স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিরাজমান দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাবকে গ্রামাঞ্চল তথা ঘরে ঘরে বিস্তৃত করবে’ _ এমনি বক্তব্য তুলে ধরা

‘নির্বাচনী আইনের সংস্কার: আমরা কোথায়?’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত‘নির্বাচনী আইনের সংস্কার: আমরা কোথায়?’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে সংবিধানে অগাধ ক্ষমতা দেওয়া থাকলেও, কমিশন যেন তা প্রয়োগে অনিচ্ছুক বা অপরাগ। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে কমিশন কারও বিরুদ্ধে