সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক Uncategorized সুজন-এর উদ্যোগে ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সুজন-এর উদ্যোগে ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২১৩টি কেন্দ্রে ‘বিস্ময়করভাবে শতভাগ ভোট পড়ার অনিয়ম’ তদন্তে রাষ্ট্রপ্রতি মো. আবদুল হামিদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’ নেতৃবৃন্দ। এজন্য রাষ্ট্রপতিকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে নির্বাচন কমিশনের বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তাঁরা। তাঁরা আজ ৯ জুলাই ২০১৯, মঙ্গলবার, সকাল ১১.০০টায়, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিশেস্নষণ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন থেকে উক্ত দাবি জানান।

মূল প্রবন্ধটি সম্পূর্ণ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুজন-সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান। ‘সুজন’ নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপসি’ত ছিলেন সুজন-সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজন নির্বাহী সদস্য সৈয়দ আবুল মকসুদ, ড. তোফায়েল আহমেদ এবং ড. শাহদীন মালিক প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘ফলাফল বিশেস্নষণ করতে গিয়ে আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করেছি যে, ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার জন্য নির্ধারিত ৪০,১৫৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১০৩টি আসনের ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ (১০০%) ভোট পড়েছে। ৯৯% ভোট পড়েছে ১২৭ ভোটকেন্দ্রে, ৯৮% ভোট পড়েছে ২০৪টি ভোটকেন্দ্রে, ৯৭% ভোট পড়েছে ৩৫৮ ভোটকেন্দ্রে এবং ৯৬% ভোট পড়েছে ৫১৬ ভোটকেন্দ্রে। অর্থাৎ ৯৬-১০০% ভোট পড়েছে ১,৪১৮টি কেন্দ্রে। এছাড়াও ৯০-৯৫ শতাংশ ভোট পড়েছে ৬,৪৮৪ টি ভোটকেন্দ্রে, (নির্বাচন কমিশন কর্তৃক কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল নিয়ে সুজনের বিশ্লেষণ দেখতে ক্লিক করুন) ৮০-৮৯ শতাংশ ভোট পড়েছে ১৫,৭১৯টি ভোটকেন্দ্রে, ৭০-৭৯ শতাংশ ভোট পড়েছে ১০,০৭৩টি ভোটকেন্দ্রে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৮৭.১৩% ভোট পড়েছিল এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বনিম্ন ৪০.০৪% ভোট পড়েছিল। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন থেকে যায়, ভোটের জন্য নির্ধারিত সময়ে শতভাগ ভোটপড়া কি সম্ভব?’

তিনি বলেন, ‘শতভাগ ভোট পড়া কেন্দ্রসমূহ সমপর্কে দলভিত্তিক অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা যায় যে, ২১৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৮১টি (৮৪.৯৭%) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে বিজয়ী ৯০ জন সংসদ সদস্যের, ২১টি (৯.৮৫%) জাতীয় পার্টি থেকে বিজয়ী ১০ জন সংসদ সদস্যের, ৮টি (৩.৭৫%) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে বিজয়ী ১ জন সংসদ সদস্যের, ২টি (০.৯৩%) বিকল্পধারা বাংলাদেশ থেকে বিজয়ী ১ জন সংসদ সদস্যের এবং ১টি (০.৪৬%) জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) থেকে বিজয়ী ১ জন সংসদ সদস্যের নির্বাচনী আওতাভুক্ত। যে ২১৩টি ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে, তাতে ভোট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, নৌকা প্রতীকে ভোট পড়েছে বৈধ ভোটের ৭১.৮৩%, ধানের শীষ প্রতীকে পড়েছে ১৪.৬৩%, লাঙ্গল প্রতীকে পড়েছে ৭.১৯%, হাতপাখা প্রতীকে পড়েছে ১.১৭%, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ২.৪৪% এবং অন্যান্য দলসমূহ পেয়েছে ১ শতাংশের কম।’

দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘বিশেস্নষণে আরও দেখা গিয়েছে যে, ৭৫টি আসনের ৫৮৭টি কেন্দ্রের সকল (১০০%) বৈধ ভোট শুধুমাত্র একজন করে প্রার্থী পেয়েছেন। অন্য কোনো প্রার্থী ১ ভোটও পাননি। এই ৫৮৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫৮৬টিতে (৯৯.৮৩) সকল ভোট পেয়েছেন নৌকা প্রতীকের এবং ১টি কেন্দ্রের (০.১৭%) সকল ভোট পেয়েছেন ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী। এই ৭৫টি আসনের ৭৪টিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের এবং ১টিতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধিক হারে ভোট পড়াকে অনেকেই প্রশ্নবিদ্ধ মনে করেন। অনেকের মতে নির্বাচনের দিনের চিত্রের সাথে ৫৮.৮২% ভোটকেন্দ্রে (২৩,৬২১টি) ৮০% এর অধিক ভোট পড়া স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। তার পরেও দেখা যায় ৯০% এর অধিক ভোটপড়া কেন্দ্রের শতকরা হার ১৯.৬৭% (৭,৯০২টি) এবং শতভাগ ভোটপড়া কেন্দ্রের শতকরা হার ০.৫৩% (২১৩টি)।’

দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ‘কোনো ভোটকেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়ার বিষয়টি যৌক্তিকও নয়, কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্যও নয়। কেননা তালিকাভূক্ত ভোটারের মৃত্যুবরণ, দেশের বাইরে অবস’ান, জরুরি কাজে এলাকার বাইরে অবস’ান, অসুস’তা ইত্যাদি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তাই ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়া যে কোনো যুক্তিতেই স্বাভাবিক নয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাও একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন যে, শতভাগ ভোট পড়া স্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন এব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের করার কিছু নেই। এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, যেহেতু শতভাগ ভোটের মধ্যে বাতিল ভোটও রয়েছে, তাই এটাকে শতভাগ ভোট পড়া বলা যাবে না। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি হাসির পাত্রে পরিণত হয়েছেন।’

তিনি বলেন, আমরা জানি যে, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। দেশে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও শানিত্মপূর্ণ তথা সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার মূল দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। এই প্রতিষ্ঠানটির প্রধান হিসেবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কোনোভাবেই এ কথা বলতে পারেন না। কেননা আমাদের সর্বোচ্চ আদালত (আপিল বিভাগ) একাধিক রায়ে নিশ্চিত করে বলেছে, ‘নির্বাচন ফেয়ার, জাস্টলি ও অনেস্টলি’ হলো কিনা তা খতিয়ে দেখার দায় নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশন যদি সন’ষ্ট হয় যে, নির্বাচন অবাধ হয়নি, তবে কমিশনের ক্ষমতা আছে গোটা নির্বাচন তদনত্ম সাপেক্ষে বাতিল করা এবং নতুন করে নির্বাচন করার।

তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে অধিক হারে ভোট পড়া কেন্দ্রের সংখ্যা বেশি হলেও স্বল্প সংখ্যক ভোট পড়ার চিত্রও উলেস্নখযোগ্য। দেখা গেছে যে, মোট ৯৩১ ভোটকেন্দ্রে (২.৩১%) ৫০% শতাংশের কম ভোট পড়েছে। বিশেস্নষণে নিম্ন হারে ভোট পড়ার বিষয়টি অনুসন্ধান করতে গিয়ে আরও দেখা যায় যে, ৫টি আসনের ১১টি ভোটকেন্দ্রে ৫%-এর কম, ১০টি আসনের ২০টি ভোটকেন্দ্রে ৬-১৯%, ৪৮টি আসনের ৩০১টি ভোটকেন্দ্রে ২০-৩৯% এবং ৫৯৯ ভোটকেন্দ্রে ৪০-৪৯% ভোট পড়েছে।’

দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ভোটপ্রাপ্তির দিক থেকে এই দুই জোটের মধ্যে ব্যাপক ফারাক লক্ষ করা যায়। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থীদের ভোট প্রাপ্তির দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় যে, ১,২৮৫টি কেন্দ্রে (৩.২০%) তারা কোনো ভোট পাননি (০ ভোট), নৌকা প্রতীকের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা মাত্র ২টি কেন্দ্র (০.০০০৪%)। ধানের শীষের প্রার্থীরা ১% এর কম ভোট পেয়েছেন ৬,০৭৫টি (১৫.১৩%) ভোটকেন্দ্রে, পক্ষানত্মরে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ১%-এর কম ভোট পেয়েছেন ২২টি (০.০৫%) ভোটকেন্দ্রে;; ধানের শীষের প্রার্থীরা ২% ভোট পেয়েছেন ২,৫৩৫টি (৬.৩১%) ভোটকেন্দ্র্রে, পক্ষানত্মরে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ২% ভোট পেয়েছেন ২৯টি (০.০৭%) ভোটকেন্দ্রে; ধানের শীষের প্রার্থীরা ৩% ভোট পেয়েছেন ১,৮৪৭টি (৪.৬%) ভোটকেন্দ্রে, পক্ষানত্মরে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ৩% ভোট পেয়েছেন ২৩টি (০.০৬%) ভোটকেন্দ্রে; ধানের শীষের প্রার্থীরা ৮১-৯০% ভোট পেয়েছেন ১৩৯টি (০.৩৫%) ভোটকেন্দ্রে, পক্ষানত্মরে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ৮১-৯০% ভোট পেয়েছেন ৬,০৭৭টি (১৫.১৩%) ভোটকেন্দ্রে; ধানের শীষের প্রার্থীরা ৯১-৯৯% ভোট পেয়েছেন ১৫টি (০.০৪%) ভোটকেন্দ্রে, পক্ষানত্মরে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ৯১-৯৯% ভোট পেয়েছেন ১৩,৮২৪টি (৩৪.৪৩%) ভোটকেন্দ্রে; ধানের শীষের প্রার্থীরা ১০০% ভোট পেয়েছেন ১টি (০.০০২%) ভোটকেন্দ্রে, পক্ষানত্মরে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা ১০০% ভোট পেয়েছেন ৫৮৬টি (১.৪৬%) ভোটকেন্দ্রে।

তিনি বলেন, ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যনত্ম ১৮টি আসনে টানা ৪টি নির্বাচনে (১৯৯৬-এর ফেব্রম্নয়ারির নির্বাচন ব্যতীত) বিএনপির প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২টি আসন ব্যতীত উক্ত আসনসমূহে বিএনপি প্রার্থীদের স্বল্প সংখ্যক ভোট প্রাপ্তি অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অনেকের মাঝেই প্রশ্ন জেগেছে, ঐ সকল এলাকার ভোটারদের মনসত্মত্ব কি রাতারাতি পরিবর্তিত হয়ে গেল?’

তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফলাফল নিয়ে শুধু প্রশ্নই ওঠেনি, প্রাথমিক ফলাফলের সাথে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলে কিছুটা অমিলও পরিলক্ষিত হয়েছে। আমরা সুজন-এর পক্ষ থেকে নির্বাচনের পর পরই রিটার্নিং অফিসার স্বাক্ষরিত আসনভিত্তিক ফলাফল সংগ্রহ করেছিলাম। কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল প্রকাশের পর পূর্বে প্রাপ্ত ফলাফলের সাথে কিছু আসনে পার্থক্য লক্ষ করা গিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘৬টি আসনে ইভিএম-এ ভোট পড়ার গড় ছিল-৫১.৪২%। তুলনা করলে দেখা যায়, ৩০০ আসনে গড়ে ৮০.২০% ভোট পড়লেও ইভিএম-এ ভোট পড়ার গড়-৫১.৪২%। ব্যালট পেপারে ভোট হয়েছে ২৯৪টি আসনে, সেখানে গড়ে ভোট পড়েছে ৮০.৮০%। দেখা যাচ্ছে যে, ৩০০ আসনের গড়ের সাথে ইভিএমএ গড়ের পার্থক্য ২৮.৭৮%। ব্যালট পেপারে ভোট হয়েছে যে ২৯৪টি আসনে তার সাথে ইভিএমএ ভোটের পার্থক্য ২৯.৩৮%। সকল আসনে নৌকা প্রতীকের ভোট প্রাপ্তির গড় ৭৬.৮৬% হলেও ইভিএম-এ ৫৪.৪৩%। একইভাবে সকল আসনে ধানের শীষ প্রতীকের ভোট প্রাপ্তির গড় ১৩.৩০% হলেও ইভিএম-এ ১৮.০১%। দেখা যায় যে, জাতীয় গড়ের তুলনায় ইভিএম-এ নৌকা প্রতীকে ভোট ২২.৪৩% কম এবং ধানের শীষে ৪.৭১% বেশি পড়েছে। ইভিএম-এ ভোটপড়ার হার কেন কম, এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যা থাকা উচিৎ ছিল। ইভিএম ব্যবহারের ফলে আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করতে না পারার কারণেই কি এমনটা ঘটেছে?’

দিলীপ কুমার সরকার বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনিয়ম সমপর্কে বিভিন্ন ধরনের অনেক অভিযোগ আগে থেকেই উঠেছিল। কেন্দ্রভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রকাশের পর উত্থাপিত অনেক অভিযোগ যৌক্তিক বলে মনে হচ্ছে।’

পরিশেষে তিনি বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সমপর্কে যে অভিযোগগুলো উত্থাপিত হয়েছে, তা তদনত্ম করে যথাযথ ব্যবস’া গ্রহণের জন্য আমরা নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিলাম। নির্বাচনের ফলাফল বিশেস্নষণের লক্ষ্যে আয়োজিত আজকের এই সংবাদ সম্মেলন থেকেও আমরা শতভাগ ভোট পড়ার বিষয়টি অনুসন্ধানসহ গুরম্নতর নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগসমূহ তদনত্ম করে সংশিস্নষ্টদের বিরম্নদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস’া গ্রহণের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। যথাযথ তদনেত্মর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের দায় নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস’া নেওয়াও জরম্নরি। নইলে আমাদের নির্বাচনী ব্যবস’া পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। একইসাথে অপূর্ণই থেকে যাবে আমাদের গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণের সেই স্বপ্নও।’

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনী ব্যবস’া ভেঙে পড়েছে এবং নির্বাচনের প্রতি মানুষের অনাস’া সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে শানিত্মপূর্ণ প্রক্রিয়ায় ড়্গমতা হসত্মানত্মরের রাসত্মা রম্নদ্ধ হয়ে গেলে তা কারো জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।’

তিনি বলেন, ‘ইভিএম-এর সাথে অন্য আসনগুলোর ভোটের শতকরা হারে কেন এত তফাৎ হলো কমিশনের পড়্গ থেকে তার একটি ব্যাখ্যা দেওয়ার দরকার ছিল। আদালতের রায় অনুযায়ী, নির্বাচনে অনিয়ম হলে সেটি তদনত্ম করে কমিশন চাইলে সে নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করতে এবং নতুন করে নির্বাচন আয়োজন করতে পারে। কমিশন বলছে, নির্বাচনের অনিয়ম তদনত্ম করবে ট্রাইব্যুনাল। কিন’ কমিশন কেন আগে থেকে পদড়্গেপ নেয়নি।’ রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে ফলাফলের এ অস্বাভাবিকতা তদনত্ম করে দায়ীদের বিরম্নদ্ধে ব্যবস’া নেবেন বলে আমরা আশা করি।

ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘সত্তরের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নে কমিউনিস্ট পার্টিও শতভাগ ভোট পায়নি। অথচ তাদেরকেও আমরা ছাড়িয়ে গেছি। পূর্ণাঙ্গ ফলাফল দেখার পর পাগল ছাড়া কেউ এ নির্বাচনকে সষ্ঠুু মনে করবেন না। প্রাথমিক ফলাফলের সাথে চূড়ানত্ম ফলাফলের অমিল প্রমাণ করে নির্বাচন কমিশনও কারচুপির সঙ্গে যুক্ত। আমি মনে করি, এই ধরনের কারচুপির নির্বাচন আয়োজন করা কমিশনের সদস্যদের বিশেষ করে সিইসির পেশাগত অসদাচারণ। এ নির্বাচনের অসংগতিপূর্ণ তথ্যকে আমলে নিয়ে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে দায়ীদের অপসারণ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন বলে আমরা আশা করি।

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘অতীতেও অস্বচ্ছ নির্বাচন হয়েছে, গোঁজামিলের নির্বাচন হয়েছে। কিন’ বর্তমান নির্বাচন কমিশন গোঁজামিলে না গিয়ে ‘সোজামিল’ অর্থাৎ শতভাগ ভোটে চলে গেছে, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এমন নির্বাচন আয়োজনের জন্য বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনকে রোজ হাশরের দিনে হলেও জবাবদিহি করতে হবে।’

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বাচনের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক নির্বাচন। এই কারচুপির নির্বাচন আয়োজনের বিচার না হওয়া এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে যে আর কোনো নির্বাচন না হওয়ার সুযোগ নেই।’ কারচুপির নির্বাচনের কারণে স’ানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মানের অবনতি ঘটেছে বলে মনত্মব্য করেন তিনি।

Related Post

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অশগ্রহণকারী প্রার্থীগণের তথ্যের বিশ্লেষণ (বিস্তারিত প্রতিবেদন)দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অশগ্রহণকারী প্রার্থীগণের তথ্যের বিশ্লেষণ (বিস্তারিত প্রতিবেদন)

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৫ জানুয়ারি, ২০১৪ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ৩০০ সংসদীয় আসনে সর্বমোট ১১০৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা

‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের তথ্য উপস্থাপন ও সুজন-এর পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের তথ্য উপস্থাপন ও সুজন-এর পর্যবেক্ষণ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

০৭ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ীদের তথ্য উপস্থাপন এবং নির্বাচন নিয়ে সুজন-এর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরার লক্ষ্যে আজ ২৩ জানুয়ারি ২০২৪ তারিখে অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনঃ মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠাননারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনঃ মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠান

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থীদের নিয়ে ‌সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) গত রবিবার (৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নগরের দেওভোগে শেখ রাসেল পার্কের মুক্তমঞ্চে “জনগণের মুখোমুখি” অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে অংশ নেন বাংলাদেশ