আজ ২৪ জানুয়ারি ২০১৩, সকাল ১০ টায়, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে, সুজনে’র উদ্যোগে ‘দিনবদলের সনদের চার বছর’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতি জনাব এম হাফিজ উদ্দিন খানের সঞ্চালনায় বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস’াপন করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মুজমদার। বৈঠকে উপসি’ত ছিলেন জনাব সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও সুজন নির্বাহী সদস্য আলী ইমাম মজুমদার, রাজনীতিবিদ জনাব সরদার আমজাদ হোসেন ও জনাব হুমায়ূন কবির হিরু, জনাব নুরুল কাদির, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, পরিবেশ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত জনাব নাজিমউদ্দিন, সাংবাদিক মুনির হায়দার, আবুল হাসনাত, রাজনীতিবিদ মানবেন্দ্র দেব, সেন্ট জোসেফ স্কুলের শিক্ষক জনাব দীপক সরকার, জনাব বাহরাইন সুলতান বাহার, জনাব শামীম আরা নীপা প্রমূখ।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. বদিউল আলম মজুমদার বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে দিন বদলের সনদের মূলত উল্লেখযোগ্য অঙ্গীকারের বিপরীতে দেশের বর্তমান চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গত চারবছরে সরকার কতগুলো প্রাথমিক কনফিডেন্স বিল্ডিং মেজার বা জনগণের আস’া অর্জনকারী কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারতো। যেমন, ক্ষমতাধরদের সম্পদের হিসাব প্রদান, একটি আচরণবিধি প্রণয়ন, সরকারি দলের মদদে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস’া গ্রহণ, দলতন্ত্র ও ফায়দাতন্ত্রের চর্চার অবসান, দুর্নীতি দমন কার্যক্রমকে জোরদারকরণ ইত্যাদি। কিন’ দুর্ভাগ্যবশত সরকার এ সকল ক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে, ফলে ব্যাপকভাবে জনসমর্থন, বিশেষত তরুণ ও সচেতন নাগরিকদের সমর্থন হারিয়েছে, যদিও এরাই মহাজোট সরকারকে মহাবিজয় উপহার দিয়েছিল। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবধিানরে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলুপ্তির পর থেকেই রাজনৈতিক পরিসি’তি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রধান বিরোধী দল ইতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ কোন সরকার ছাড়া আগামী নির্বাচনের তাঁরা অংশগ্রহণ করবে না। আর তত্ত্বাবধায়ক বা অন-বর্তীকালীন যে নামেই হোক না কেন, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যথাসময়ে যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হয়, তাহলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে এবং আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস’া ভেঙ্গে পড়তে পারে, যা আমাদেরকে চরম সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিতে পারে।
জনাব এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতা বস’নিষ্ঠভাবে তুলে ধরাই আজকের আলোচনার উদ্দেশ্য। আমাদের সংসদে এ বিষয়ে যেহেতু আরৈাচনা হয় না, কেননা বিরোধী দল সংসদে যায় না। অত্যন- দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, যে সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে তারা শুধু তাদের সফলতার কথাই বলে। আবার বিরোধী দল সরকারী দলের শুধু সমালোচনাই করে। কিন’ সরকারের সফলতা ও ব্যর্থতা দুটিই তাকে। সরকারের সকল উদ্যোগই যে সফলতার মুখ দেখবে এমনটি নয়, তারা অঙ্গিকার বাস-বায়নে আন-রিক কিনা এটাই বিবেচ্য বিষয়। তবে সরকারের কোন কোন বিষয়ে বিশেষত দুর্নীতি রোধে আন-রিকতার ঘাটতি রয়েছে বলে তিনি মন-ব্য করেন।
জনাব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, আমাদের দেশে দল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে। এসকল প্রুতিম্রুতির কিছু কিছুর সাথে সময় ও টাকার প্রয়োজন রয়েছে। কিন’ কিছু ছিু ইস্যু যেমন সুশাসন নিশ্চিত করা, এর সাথে টাকা ও সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। দুর্নীতি দমনের জন্য টাকার প্রয়োজন নেই। আমি মনে করি অনেকগুলো ক্ষেত্রে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবই দিনবদলের সনদরে পথে বড় অন-রায়। জনাব নুরুল কাদির সুজনের উপস’পিত প্রবন্ধকে বস’নিষ্ঠ বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটে একজন নাগরিক হিসেবে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেন।
জনাব সরদার আমজাদ হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু, হলমার্ক, ডেসটিনি ইত্যাদি ইস্যুতে দুদক কার্যকর ভূমকিা পালন করতে পারেনি। তিনি আরো বলেন, ডেসটিনির রফিকুল আমিন যে সম্পদ করেছে তার কোন হিসাবও নেই। দুদকের মামলায় ডেসটিনির শীর্ষ কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করা হলেও এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আত্মসাত করা কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের কোন সম্ভবনা নাই। অধ্যাপক হুমায়ূন কবীর হিরু বলেন, আমাদের দেশে এক দিনের ভোটের গণতন্ত্র চলছে। এ সংস্কৃতি পাল্টাতে হবে। সত্যিই দিনবদলের জন্য কি প্রয়োজন তা চিহ্ণিত করতে হবে। জনাব মানবেন্দ্র দেব বলেন, আমাদের দেশে রাজনীতিবিদরা অঙ্গীকার করেনই অঙ্গীকার ভঙ্গ করার জন্য। তিনি বলেন, সরকারের অনেগুলো ক্ষেত্রে ব্যর্থতা রয়েছে। সরকার দব্যমূল্য রোধ করতে পারেনি। তারা এক্ষেত্রে সিন্ডিকেট রোধ করতে পারেনি, কেননা দলীয় লোকদের দ্বারাই সিন্ডিকেট পরিচালিত হচ্ছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বিরোধী দলের মহাসচিবকে একটির পর একটি মামলা দিয়ে আটকিয়ে রাখা হয়েছে অথচ শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে, এ কোন রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমাদের।
জনাব মুনির হায়দার বলেন, আমাদের রাজনীতিবিদরা এতটাই বধির যে তারা কোন কিছুই কানে নিচ্ছেন না, আমরা নিজেরাই দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিয়ে আলোচনা করছি তারা কানে নিচ্ছেন না। বর্তমান সরকারও তাদের দিনবদলের সনদের মূল লক্ষ্যসমূহ থেকে যোজন যোজন দূরে সরে গিয়েছে। বর্তমান সরকার একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে, যা তাদের সফলতা কিন’ তা বাস-বায়নে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে মন-ব্য করেন জনাব দীপক সরকার। জনাব লায়লা সাজিদ বলেন, জামায়াত ইসলামীর সাবেক সদস্য আবুল কালাম আযাদের ফাঁসির আদেশ হয়েছে, যদিও তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখে ধূলা দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। সরকার কেন অন্য আসামীদের মামলার রায় দিচ্ছে না। তিনি সরকারের কাছে এ বিচার দ্রুত ও সম্পূর্ণ নিরপেক্ষতার সাথে সম্পন্ন করার আহ্বান জানান।