সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক ড. বদিউল আলম মজুমদার,লেখালেখি বাজেট: বাজেটে প্রান্তিক মানুষের হিস্যা

বাজেট: বাজেটে প্রান্তিক মানুষের হিস্যা

palo_logo
বদিউল আলম মজুমদার
আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রী যখন সংসদে বাজেট উত্থাপন করছিলেন, আমি তখন দক্ষিণবঙ্গে ছিলাম। ঘূর্ণিঝড় আইলা-উপদ্রুত এলাকা ঘুরে ঢাকায় ফেরার পথে একটি চায়ের দোকানে জড়ো হওয়া গ্রামের অতি সাধারণ কিছু মানুষের সঙ্গে বসে টেলিভিশনে বাজেট বক্তৃতা দেখছিলাম। বাজেট বক্তৃতার প্রতি আমার প্রবল আগ্রহ দেখে চায়ের দোকানের মানুষগুলো অনেকটা বিস্নিত হন! একজন বলেই বসেন−এত মনোযোগ দিয়ে এ বক্তৃতা শুনে কী হবে? বেল পাকলে কাকের কী লাভ? বাজেটের কোটি কোটি টাকার ভাগ কি আমরা পাব?

আসলেই তো, বাজেট বক্তৃতা শুনে এসব মানুষের কী লাভ! প্রবৃদ্ধি বাড়লে তার অতি সামান্য অংশই চুইয়ে চুইয়ে তাদের কাছে পৌঁছবে। কালো টাকা সাদা করার বিধান তো তাদের কোনো কাজে আসবে না। গাড়ির শুল্ক বাড়ানো-কমানোর ওপরও তাদের দৈনন্দিন জীবনের কোনো প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। তাই এ কথা ভাবা অস্বাভাবিক নয় যে মাননীয় অর্থমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় কী বললেন না-বললেন, কত টাকার বাজেট তিনি উত্থাপন করলেন, তাতে সাধারণ মানুষের তেমন কিছুই আসে যায় না।
বস্তুত স্বাধীন বাংলাদেশে তিন ডজনের বেশি বাজেট প্রণীত হয়েছে এবং প্রত্যেকটি বাজেটেই গ্রামীণ বিরাট জনগোষ্ঠীর অবস্থা পরিবর্তনের কথা বারবার বলা হয়েছে। কিনতু বাস্তবে তার প্রতিফলন তেমনটা ঘটেনি; বরং হয়েছে তার উল্টো। ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত কিংবা ক্ষমতার কাছাকাছি অবস্থান করা একদল ব্যক্তি বছরের পর বছর একচেটিয়াভাবে লাভবান হয়েছে, আর ক্রমাগতভাবে বঞ্চিত হয়েছে সাধারণ মানুষ। লাখ লাখ ব্যক্তি অন্যায় ও অবাঞ্ছিত পন্থা অবলম্বন করে কোটিপতি হয়েছে এবং তার অশ্লীল প্রদর্শনী তারা প্রতিনিয়ত করছে। কিনতু গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর অনেকেরই এখনো নুন আনতে পানতা ফুরায়, যদিও তাদের নামে লাখো কোটি টাকা অনুদান এসেছে বা ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে।
তবে এবার কি ভিন্ন কিছু আশা করা যায়? তা অবশ্য নির্ভর করবে বাজেট বরাদ্দের কতটুকু সুফল কারা পায়, তার ওপর। উত্থাপিত মোট বাজেটের পরিমাণ প্রায় এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ বিশাল অঙ্কের বাজেট আমাদের ১৫ কোটি জনগণের মধ্যে সমভাবে ভাগ করে দিলে প্রত্যেকের হিস্যায় পড়বে যথাক্রমে প্রায় সাত হাজার ৬০০ টাকা এবং দুই হাজার টাকা। পাঁচ সদস্যের একটি বিত্তহীন পরিবারের হিস্যা হবে যথাক্রমে প্রায় ৩৮ হাজার টাকা এবং ১০ হাজার টাকা। স্নরণ রাখা প্রয়োজন যে এগুলো তাদের হিস্যা মাত্র, প্রাপ্য নয়। কারণ, এ অর্থের একটা বড় অংশ সরকার পরিচালনা থেকে শুরু করে বৈদেশিক ঋণের সুদ প্রদান, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি কাজে ব্যয় হবে।
বাজেট বরাদ্দে তাদের হিস্যার পরিমাণের অর্থ প্রত্যেক পরিবারের প্রাপ্য না হলেও, এর সমপরিমাণ সেবা (যেমন: শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ঋণ, নিরাপত্তা ইত্যাদি সেবা) ও সুযোগ-সুবিধা পাওয়া তাদের অধিকার। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষগুলো কি তা পায়? যদি না পায়, তাহলে কারা তা পায়? অতীতে এগুলোর ফসল মূলত সমাজের বিত্তশালীদের ঘরে উঠেছে, যাদের অধিকাংশই শহরবাসী। ফলে স্বাধীন বাংলাদেশে গ্রাম-শহরের বিভাজন ক্রমাগতভাবে বেড়েছে। আকাশচুম্বী হয়েছে ধনী-দরিদ্রের মধ্যকার বৈষম্য। বস্তুত আজ আমরা এক চরম অসম ও বৈষম্যমূলক সমাজে পরিণত হয়েছি। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে এ অবস্থা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি এবং উগ্রবাদের বিস্তারের জন্য একটি উর্বর ক্ষেত্র প্রস্তুত করে রেখেছে।
গ্রামীণ জনগোষ্ঠী কীভাবে বঞ্চিত হয় তা একটু খতিয়ে দেখা যাক। মোট বাজেট এবং উন্নয়ন বাজেট চার হাজার ৫০০ ইউনিয়নের মধ্যে ভাগ করে দিলে প্রত্যেক ইউনিয়নের গড় হিস্যা হবে যথাক্রমে প্রায় ২৫ কোটি এবং সাত কোটি টাকা। এ হিস্যার কতটুকু একটি ইউনিয়নে এবং কতটুকু ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে ব্যয় হয়?
বেশ কয়েক বছর আগে ‘দি হাঙ্গার প্রজেক্ট’-এর স্বেচ্ছাব্রতী ‘উজ্জীবক’দের সহায়তায় ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে তৃণমূল পর্যায়ে প্রথম প্রকাশ্য বাজেট অধিবেশনের আয়োজন শুরু হয়। সে আয়োজন উপলক্ষে আমরা হিসাব করে দেখি একটি ইউনিয়নে সরকার বিভিন্নভাবে সরাসরি কত টাকা ব্যয় করে। আমাদের হিসাব মতে, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নে, যেখানে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্য বাজেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়−সরকার ২০০১-০২ অর্থবছরে উপজেলার মাধ্যমে সরাসরিভাবে প্রায় এক কোটি ৬৩ হাজার টাকা ব্যয় করে, যার মাত্র ২৩ শতাংশ বা ২৩ লাখ টাকা ব্যয় হয় ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে। এর মধ্য থেকে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপি থেকে ইউনিয়ন পরিষদে বরাদ্দ ছিল মাত্র তিন লাখ টাকার মতো। ফতেহপুর ইউনিয়নে ব্যয় করা বাকি ৬৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকার ৭৩ শতাংশ বেতন-ভাতা খাতে ব্যয় হয়েছে, যার অধিকাংশই ছিল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকদের বেতন-ভাতা।
কোটি কোটি টাকার হিস্যার মধ্যে মাত্র এক কোটি ৬৩ লাখ টাকা একটি ইউনিয়নে ব্যয় হলে, বাকি টাকা যায় কোথায়? বাকি টাকা অবশ্যই ব্যয় হয়, তবে কেন্দ্রীয়ভাবে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর-অধিদপ্তর ও অন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে। এর একটি বিরাট অংশ ব্যয় হয় ওভারহেড খাতে। আরেকটি অংশ ব্যয় হয় ‘পাবলিক গুডস’ উৎপাদনে বা জনগণের কল্যাণে সৃষ্ট অবকাঠামো ও সেবা প্রদানে; অনেক ক্ষেত্রে যা জনহয়রানি সৃষ্টির কারণ হয়। আরেকটি বড় অংশ পড়ে অবশ্য লুটপাট ও অপচয়ের কবলে। আর ব্যয়ের বিরাট অংশই থেকে যায় শহর-মহানগরে।
কেন্দ্রীভূত ব্যয়ের একটি বড় অংশ যে লুটপাটের কবলে পড়ে, তার দৃষ্টান্ত আমি দেখে এসেছি সাতক্ষীরার আইলা-কবলিত অঞ্চলে। আইলা-উপদ্রুত এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ জলোচ্ছ্বাস, যা উপকূলীয় বাঁধগুলো ভেঙে লবণাক্ত পানি লোকালয়ে ঢুকে জনগণকে সর্বস্বান্ত করে দিয়ে গেছে−তারা এখন লবণাক্ত পানির ওপর ভাসছে। এলাকাবাসীর মতে, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়নগুলোকে জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষাকল্পে প্রথম বাঁধ নির্মিত হয় ১৯৬২ সালে। এরপর থেকে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয় বাঁধগুলোর সংস্কারের লক্ষ্যে। তাদের অভিযোগ−এ কোটি কোটি টাকা ব্যয় সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের শ্রীবৃদ্ধি ঘটালেও, বাঁধগুলোর কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন ঘটেনি−এগুলো কাঁচাই রয়ে গেছে এবং যথাযথভাবে এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণও করা হয়নি। এভাবে দুর্নীতি-উপদ্রুত এলাকার বহু মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারকে, যা তাদের সংবিধানস্বীকৃত মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। একইসঙ্গে কোটি কোটি টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি সাধন করেছে−আগামী কয়েক মাসেও এখানে আর কিছু উৎপাদনের সম্ভাবনা নেই। জনগণের সচেতনতার অভাব এবং সরকারি কর্মকর্তাদের স্থানীয় পর্যায়ে কোনো দায়বদ্ধতা না থাকার জন্যই তাদের পক্ষে মূলত এ ধরনের কাজ করে পার পাওয়া সম্ভবপর হয়েছে।
বাজেটের প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক। মাননীয় অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত জাতীয় ও উন্নয়ন বাজেটে প্রতিটি ইউনিয়নের গড় হিস্যা ন্যূনতম (উন্নয়ন বাজেটের) সাত কোটি টাকা এবং সর্বোচ্চ (মোট বাজেটের) ২৫ কোটি টাকা। এ টাকার একটি বড় অংশ−অন্তত তিন-চার কোটি টাকা যদি প্রতিবছর প্রতিটি ইউনিয়নে সরাসরিভাবে ব্যয় করা হয়, তাহলে আগামী চার-পাঁচ বছরেই শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পয়োনিষ্কাশন, নারী উন্নয়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ, জন্ননিয়ন্ত্রণ, আত্মকর্মসংস্থানসহ সব ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব পরিবর্তন অর্জন সম্ভব হবে। কারণ, মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত এ সবগুলো সমস্যাই স্থানীয় এবং এগুলোর সমাধানও স্থানীয়ভাবে হতে হবে, স্থানীয় নেতৃত্বকে কাজে লাগিয়ে−কেন্দ্রীয়ভাবে এগুলো সমাধান সম্ভব নয়। এ ছাড়া এসব অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতাও অতি সহজে নিশ্চিত করা যাবে−তৃণমূল পর্যায়েই প্রকাশ্য বাজেট অধিবেশন, গ্রাম/ওয়ার্ড সভা ইত্যাদির মাধ্যমে তা করা সম্ভব। এর মাধ্যমে আরও সম্ভব সমস্যা সমাধানে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ ও শক্তিশালী অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। আর আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, ‘গণতন্ত্র যদি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অর্থবহ না হয়, তার ভিত্তি দুর্বল থেকে যেতে বাধ্য।’ (দারিদ্র্য দূরীকরণ: কিছু চিন্তাভাবনা, আগামী প্রকাশনী, ১৯৯৫) অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে গণতন্ত্র দুর্বল ও অকার্যকর হলে অগণতান্ত্রিক শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং তারা ক্ষমতা দখল করতেও দ্বিধা করে না।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে তৃণমূল পর্যায়ে জনসম্পৃক্ততায় বার্ষিকভাবে এ ধরনের বড় অঙ্কের ব্যয় অব্যাহত রাখা গেলে অচিরেই দারিদ্র্য দূরীভূত হবে, সাধারণ মানুষ তাদের ন্যায্য হিস্যার যথার্থ অংশ পাবে এবং পল্লীজীবনে গতিশীলতা আসবে, যা আওয়ামী লীগের দিনবদলের সনদের অন্যতম অগ্রাধিকার। আর এ জন্য প্রয়োজন হবে ক্ষমতা, দায়-দায়িত্ব এবং সম্পদের ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণ এবং স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ। স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে শৃঙ্খলমুক্ত না করলে, তাদের সাংবিধানিক নির্দেশনা অনুযায়ী ‘স্থানীয় শাসনের ভার’ না দিলে এবং উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত না করলে, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর বঞ্চনার অবসান ঘটবে না। আর বাজেট বিত্তবানদের বিষয় হিসেবেই থেকে যাবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে মূলত কর্মকর্তাদের। প্রসঙ্গত, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর ১৯৯৫ সালের গ্রন্থে যথার্থই বলেছেন: ‘আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা নয়, একমাত্র বিকেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রব্যবস্থাই দারিদ্র্য দূরীকরণের কর্মসূচি দক্ষতার সাথে বাস্তবায়ন ও তাতে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে। এবং এটা করার জন্য দক্ষ প্রতিনিধিত্বশীল একটি স্থানীয় সরকার-কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।’
বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার একটি বাস্তব কারণও রয়েছে। বাজেটের মাধ্যমে বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ করলেই হবে না, এর সুফল পেতে হলে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। অতীতে এডিপি বরাদ্দ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা হতাশাব্যঞ্জক। স্থানীয় পর্যায়ে সম্পদ ও দায়-দায়িত্বের বিকেন্দ্রীকরণ ঘটলেই এ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব। তাই দিনবদলের সনদের অঙ্গীকার−দারিদ্র্য ঘুচাও, বৈষম্য রুখো এবং পল্লীজীবনে গতিশীলতা অর্জন−বাস্তবে রূপায়িত করতে হলে স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও গতিশীল করার এবং প্রায় ৬০ হাজার স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের নেতৃত্বকে ক্ষমতায়িত করার কোনো বিকল্প নেই।
কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থার পরিণাম শুভ হয় না। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিশ্চয়ই স্নরণ আছে, ষাটের দশকে আমরা স্লোগান তুলেছিলাম−পিন্ডি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা! এর মূল কারণ ছিল কেন্দ্রীভূত শাসনব্যবস্থায় বাঙালিদের প্রতি বঞ্চনা। তৃণমূলের সাধারণ মানুষের প্রতি আমাদের বর্তমান বঞ্চনার ধারা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে হয়তো স্লোগান উঠবে−ঢাকা না রৌমারী, রৌমারী-রৌমারী। এ ছাড়া অর্থনীতিবিদেরা দাবি করতে পারেন, আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোকে সঙ্কুচিত করে সাধারণ জনগণের ন্যায্য হিস্যার একটি অংশ চেকের মাধ্যমে জনগণের কাছে সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়ার, যা তাদের ‘হাইয়ার ইনডিফারেন্স কার্ভ’ বা নিরপেক্ষ রেখাকে ওপরে নিয়ে যাবে এবং তারা অধিক উপকৃত হবে।
এ লেখা শেষ করছি বিশ্বমন্দার প্রভাব মোকাবিলা করার লক্ষ্যে মাননীয় অর্থমন্ত্রীর প্রণোদনা প্যাকেজের প্রতি পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রণোদনা পাকেজ হিসেবে বাজেটে পাঁচ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ থেকে কারা কী সুবিধা পাবে তা নির্দিষ্ট করা বিকেএমএইর মতো আমাদেরও দাবি। আমাদের আরও দাবি, কীভাবে এ অর্থ সাধারণ নাগরিকদের উপকৃত করবে তাও সুস্পষ্ট করার। এ ছাড়া মন্দা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন আমাদের নিজেদের অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনয়ন এবং অভ্যন্তরীণ চাহিদার সম্প্রসারণ। এ লক্ষ্যে মাননীয় অর্থমন্ত্রী কি প্রণোদনা প্যাকেজ হিসেবে প্রায় ছয় কোটি দরিদ্রের প্রত্যেককে এক হাজার টাকার একটি চেক পাঠানোর জন্য ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করতে পারতেন না? এর মাধ্যমে একইসঙ্গে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিও চাঙা হতো এবং ন্যায়পরায়ণতাও প্রতিষ্ঠিত হতো, যা অর্থনৈতিক সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথকে সুগম করত। উল্লেখ্য, অনেক দেশেই নাগরিকদের এভাবে অর্থ প্রদানের রেওয়াজ রয়েছে। আশা করি, অর্থমন্ত্রী এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বিষয়টি ভেবে দেখবেন।
ড. বদিউল আলম মজুমদার: সম্পাদক, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক ও কান্ট্রি ডিরেক্টর, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ।

তথ্য সূত্র: প্রথম আলো, ২২ জুন ২০০৯

Related Post

তারুণ্যের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎতারুণ্যের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ

বদিউল আলম মজুমদার | তারিখ: ০৩-০৪-২০১২ সম্প্রতি ঢাকার ব্রিটিশ কাউন্সিল মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী ‘অ্যাকটিভ সিটিজেন এচিভার্স সামিট’ বা সফল সক্রিয় নাগরিকদের মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। সারা দেশ থেকে প্রায় দেড়

নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে সংশয়নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে সংশয়

বদিউল আলম মজুমদার | তারিখ: ২৩-১১-২০১২ ১১ নভেম্বর ২০১২ তারিখের প্রথম আলোয় প্রকাশিত দুটি সংবাদের শিরোনাম আমাদের মনে দারুণ সংশয়ের সৃষ্টি করেছে। শিরোনাম দুটি হলো: ‘সব মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব চাওয়া হবে: