“সচেতন, সোচ্চার ও সংগঠিত জনগণই গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ” এই শ্লোগানকে সামনে রেখে গত ৫ জানুয়ারি, ২০১৩ ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সারা দেশের ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের প্রায় ছয়’শ জন নেতৃবৃন্দ এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকার ‘সুজন’ নেতৃবৃন্দরা অনুষ্ঠানস’ল শিশু একাডেমী মিলনায়তন, ঢাকায় জড়ো হতে থাকে। সকাল ১০.০০টায় অতিথি, শিক্ষক, সাংবাদিক ও ‘সুজন’-এর জাতীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপসি’ত হলে, অনুষ্ঠানস’লে এক আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। বহু আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অমিত সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টি হলেও জাতি হিসেবে আজ আমরা চরম সংকটের মুখোমুখি। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, সুশাসনের অভাব, সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার অবনতি এবং তাদের প্রতি বঞ্চনা এই সংকটের মূল কারণ। এই সংকট থেকে উত্তরণ, সকল জনগণের সম-সুযোগ নিশ্চিত করা, সর্বোপরি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের লক্ষ্যে সোচ্চার, সক্রিয় এবং সমন্বিত অঙ্গিকার ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হল ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন। ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’ আয়োজিত এ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ‘সুজনে’র কেন্দ্রিয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বিশিষ্ট এম হাফিজ উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে আরো উপসি’ত ছিলেন – ড. কামাল হোসেন, জনাব এ এসএম শাহাজাহান, ড. আকবর আলী খান, জনাব আলী ইমাম মজুমদার, ড. তোফায়েল আহমদ, ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ড. হামিদা হোসেন, জনাব ইনাম আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপক মনিরুজ্জাম মিয়া, ড. বদিউল আলম মজুমদার, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, জনাব রেজওয়ানা হাসান, জনাব বদরে আলম খান, ড. মোহাম্মদ মাসুম, জনাব জাকির হোসেন, রুহিন হোসেন প্রিন্স, মনির হায়দার প্রমুখ।
জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের শুভ সূচনা হয়। উদ্বোধনী পর্বের প্রথমেই ‘সুজন’ সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকারে’র পরিচালনায় ‘সুজনে’র সাথে সম্পৃক্ত নেতৃবৃন্দসহ বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের স্মরণে এক মিনিট শোক প্রস-াব উত্থাপন ও নীরবতা পালন করা হয়। এরপর ‘সুজনে’র সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খান উদ্বোধনী বক্তব্যে রাখেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে ‘সুজনে’র পটভূমি ও সারা দেশব্যাপী ‘সুজনে’র বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে উপসি’ত সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি বলেন, বহু চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে আজ সুজন দশম বর্ষ পূর্তি উৎসব পালন করছে। আশা করছি সুজন’র এই জয়যাত্রা অব্যাহত থাকবে। আমাদের দেশে একনায়কতান্ত্রিক শাসনের চর্চা চলছে। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে সুমঅসন কায়েম সম্ভব না।
উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদানকালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, সুজন একটি নির্দলীয় নাগরিক উদ্যোগ। সচেতন নাগরিকদের সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সুজন দীর্ঘদিন যাবৎ গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে আসছে। বিশেষত নির্বাচন, নির্বাচন কমিশনের সংস্কার, রাজনৈতিক দলের সংস্কার, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুজনের নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া ও ইতিবাচক ভূমিকা অত্যন- প্রশংসনীয় । ড. কামাল হোসেন বলেন, জনগণই ক্ষমতার মালিক। সচেতন, সোচ্চার এবং সংগঠিত নাগরিক সমাজই পারে দেশের সুশাসন নিশ্চিত করতে। ড. আকবর আলী খান বলেন, সিভিল সমাজের কাজ হচ্ছে নাগরিকের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে স্বোচ্চার হওয়া। তারা যদি সরকারের লেজুড়বৃত্তি করে তাহলে সুশাসন নিশ্চিত হবে না।
সম্পাদকীয় প্রতিবেন উপস’াপনকালে সুজন’ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সুজন দশম বর্ষপূর্তি উৎসব পালন করছে বলে আনন্দ প্রকাশ করেন, অন্যদিকে তিনি ভারাক্রান- হৃদয়ে স্বরণ করেছেন সুজনের সেইসব ঘনিষ্ঠজনদের যাঁরা সদ্য প্রয়াত হয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোজাফ্ফর আহমদ’র কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস’াকে কলুষমুক্ত করার প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখার ক্ষেত্রে সুজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন। জনাব এএসএম শাহজাহান বলেন, সুজন শুধু কাজে বিশ্বাস করে কথায় নয়, শানি-র ললিত বানী শোনানোর জন্য সুজনের জন্ম হয়নি, এটি হচ্ছে একটি একশন ওরিয়েন্টেড অর্গানাইজেশন।
দ্বিতীয় অধিবেশনে ড. বদিউল আলম মজুমদারের পরিচালনায় কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এ অধিবেশনে সম্পাদকের রিপোর্টের আলোকে সারা দেশের নেতৃবৃন্দরা আলোচনা অংশগ্রহণ করেন এবং তাদের অনুভূতি ও মতামত ব্যক্ত করেন। দেশের বিভিন্ন স’ান থেকে আগত ‘সুজন’ কমিটির নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, শিক্ষক, অভিভাবকরাও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। এ সময় যারা মন-ব্য রাখেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, জনাব আহসানাউল্লাহ ইস্মাাইলী (সম্পাদক, শরিয়তপুর), এডভোকেট সালেহা বেগম, (সভাপতি, যশোর), ড. আখতার কবীর চৌধুরী (সম্পাদক, চট্টগ্রাম), জনাব সালাউদ্দিন মিন্টু (আহ্বায়ক, নওগাঁ), জনাব অরবিন্দ পাল (সম্পাদক, নান্দাইল), অধ্যাপক মাসুম আলী খান (সভাপতি, জামালপুর), জনাব ইদ্রিস আলী (সম্পাদক, সাতক্ষীরা) প্রমুখ।
কাউন্সিল অধিবেশনে নব নির্বাচিত একুশ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহি কমিটি ও একশত একাশি সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির সভাপতি হিসাবে এম হাফিজ উদ্দিন খান ও সম্পাদক হিসাবে ড. বদিউল আলম মজুমদার নির্বাচিত হন। কার্যনির্বাহি কমিটিতে জনাব এ এস এম শাহজাহান, (সহসভাপতি), জনাব আব্দুল হক (কোষাধ্যক্ষ), জনাব জাকির হোসেন (সহ-সম্পাদক)। এছাড়াও নির্বাহী সদস্যগণ হলেন জনাব সুলতানা কামাল, জনাব রাশেদা কে চৌধুরী, বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, জনাব সৈয়দ আবুল মকসুদ, অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, জনাব সেলিনা হোসেন, ড. হামিদা হোসেন, জনাব আলী ইমাম মজুমদার ও ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সারা দেশ থেকে আগত ‘সুজনে’র বিভিন্ন ইউনিয়ন, জেলা, উপজেলা কমিটির নেতৃবৃন্দরা নিজ খরচে এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।