গত ২৯ wW‡m¤^i ২০১১, সকাল ১০.৩০টায়, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে, সুজনের উদ্যোগে স্থানীয় সরকার বিষয়ে সামপ্রতিক সরকারি সিদ্ধান্ত ও নাগরিক ভাবনা শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সুজন সহ-সভাপতি জনাব এম হাফিজ উদ্দিন খান সঞ্চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সুজন নিবার্হী সদস্য জনাব এ এস এম শাহজাহান, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিয়া, রাজনীতিবিদ ইনাম আহমেদ চৌধুরী ও হুমায়ূন কবীর হিরু, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, অধ্যাপক কামাল আতাউর রহমান, সংবাদিক মনির হায়দার, সিংড়া পৌরসভার মেয়র জনাব জনাব শামীম আল রাজী, আড়াইহাজার উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মুজাহিদুর রহমান হেলো, নারায়ণগঞ্জ সদরের ভাইসচেয়ারম্যান ফাতেমা মনির, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার ভাইসচেয়ারম্যান সাজ্জাদ আহমেদ, ইসলামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব আবুল হোসেন খান, এডভোকেট তাসনীম রানা প্রমূখ।
এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো আমাদের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যেই স্থানীয় সরকার সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব রয়েছে। স্থানীয় সরকার বিষয়ে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যে দেশে সুপ্রিম কোর্টের রায় লঙ্ঘন করা হয়, সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়, সেই দেশের সরকারের কাছ থেকে জনগণের প্রতাশা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। তিনি তার প্রবন্ধে বলেন, বর্তমান সরকার ৩টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। প্রথমত, সরকার পুনঃপ্রচলিত উপজেলা আইনটিকে সংশোধন করেছে। মোটা দাগে এ সংশোধনের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে উপজেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিষদের পরিবর্তে উপজেলা চেয়ারম্যানকে নির্বাহী ক্ষমতা প্রদান এবং ষ্ট্যান্ডিং কমিটির সংখ্যা বাড়িয়ে পরিষদের দুই ভাইস চেয়ারম্যানকে সকল ষ্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি করা হয়। সংশোধনীটি পাশ করার আগে উপজেলা পরিষদে মূলত সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান বা ভাইস চেয়ারম্যানদের সঙ্গে একটি দ্বিমূখী ক্ষমতার দ্বন্দ্ব বিরাজমান ছিল। বতর্মানে এটি একটি ত্রিমূখী দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে। দ্বিতীয়ত সরকার ৬১টি জেলায় দলীয় কিংবা অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের মধ্য থেকে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছেন। এটি আমাদের সংবিধানের নগ্ন লঙ্ঘন বলে তিনি মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে এটি আমাদের উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তেরও পরিপন্থী। এছাড়া এর মাধ্যমে জেলা পর্যায়ে একটি চরম দ্বন্দ্বাত্বক পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে বলে আমাদের আশঙ্কা। বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এক সর্বসম্মত রায়ে বলেন, ছয়মাসের মধ্যে জেলা পরিষদে নির্বাচিত ব্যক্তিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। আদালতের রায় আজও বাস্তবায়িত হয়নি এবং জেলা পরিষদের প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে এ রায় উপেক্ষা করেই। সর্বশেষ সিদ্ধান্তটি হলো, ঢাকা মহানগরীকে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণে বিভক্ত করা এবং পরবর্তীতে দুইজন সরকারি কর্মকর্তাকে এগুলোর প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ প্রদান। ঢাকা মহানগরকে বিভক্ত করে রাজধানীর ওপর জনসংখ্যার চাপ কমানো যাবে না। এর জন্য প্রয়োজন হবে একটি বলিষ্ঠ গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ কর্মসূচি। কেননা বিভক্তি এবং বিকেন্দ্রীকরণ এক বিষয় নয়। এসময় তিনি বলেন, সরকারের এসকল কর্মসূচির প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এর ফলে আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এটি আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য সুফল বয়ে আনবে না, ক্ষমতাসীন দলের জন্যও না। এসব অজনপ্রিয় সিদ্ধান্তের মাশুল শুধু বর্তমান সরকারকেই নয়, পুরো জাতিকেই হয়তো ভবিষ্যতে গুণতে হবে।
জনাব এ এস এম শাহজাহান বলেন, বতর্মান স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা জগাখিচুরিতে পরিণত হয়েছে। তিনি আরো বলেন, স্থানীয় সরকার নিবার্চিত ব্যক্তিদের দ্বারাই পরিচালিত হওয়ার কথা আর তা কার্যকর না হলে সরকার ও জাতির জন্য বোঝা হয়ে যাবে। আর এ সমস্যার সমাধান সংলাপের মাধ্যমেই হতে হবে। সরকার দলীয় কিংবা অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের মধ্য থেকে প্রশাসক নিয়োগ প্রদান করেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা বলেন, এর সাথে নিশ্চয়ই অর্থের যোগাযোগ এবং পরবর্তী নির্বাচনে জয় লাভের বাসনা রয়েছে। দেশের মানুষ সরকারের এসকল সিদ্ধান্ত মেনে নেবে না। জনাব ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, স্থানীয় সরকারকে কেন্দ্র করে আমাদের দীর্ঘ দিনের লালিত ¯^cœ‡K কবর দেবার কোন অধিকার বর্তমান সরকারের নেই। এজন্য স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করতে হলে সকল স্তরের জনগণকে নিয়ে আন্দোলন করতে হবে। জনাব হুমায়ূন কবীর হিরু বলেন, বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের কোন পর্যালোচনা করে বলে মনে হয় না। স্থানীয় সরকার কি, কীইবা এর গুরুত্ব এ নিয়েও কোনো আলোচনা-পযালোচনা করে না। এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য আমাদেরকে সামাজিক অন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। ভাইস চেয়ারম্যান জনাব ফাতেমা মনির বলেন, তিন বছর অতিবাহিত হয়ে গেল আমাদের কোন দায়-দায়িত্ব নেই, ক্ষমতা নেই। আমরা কোন কাজ করতে পারি না। সরকার আমাদেরকে হাসির পাত্রে পরিণত করেছে। জনাব আবুল হোসেন খান স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সবগুলো স্তরের বরাদ্দ বৃদ্ধির পরামর্শ প্রদান করেন এবং জেলা পরিষদের অধীনে জেলায় একটি মিনি পার্লমেন্ট গঠনের প্রস্তাব করেন। তিনি অবিলম্বে জেলা পরিষদ নিবার্চন দাবি করেন।