সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক গোলটেবিল বৈঠক সুজন-এর উদ্যোগে ‘ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন

সুজন-এর উদ্যোগে ‘ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক আয়োজন

SHUJAN Roundtable (11.12.2014)জনস্বার্থে অতি দ্রুত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচনের দাবি জানালেন সুজন নেতৃবৃন্দ
‘২০০৭ সালে মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও এখনো পর্যন- ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি, এর ফলে জনদুর্ভোগ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। অপরদিকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা এবং অনুকূল পরিসি’তি থাকার পরও অদ্যাবধি অনুষ্ঠিত হয়নি জেলা পরিষদ নির্বাচন । তাই জনস্বার্থে অতি দ্রুত এ দুটি নির্বাচন হওয়া অত্যাবশ্যক।’ আজ ১১ ডিসেম্বর ২০১৪ সকাল ১০.৩০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর উদ্যোগে ‘ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে সুজন নেতৃবৃন্দ এ মন্তব্য করেন।

সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খানের সভাপতিত্বে ও ড. বদিউল আলম মজুমদার-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেন সুজন-এর নির্বাহী সদস্য বিচারপতি কাজী এবাদুল হক ও জনাব আলী ইমাম মজুমদার, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, রাজনীতিবিদ জনাব এ.এস.এম আকরাম, সাবেক সংসদ সদস্য হুমায়ূন কবীর হিরু, সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কমিশনার ফরিদউদ্দিন, অধ্যাপক স ম সিদ্দিকী, কাত্তিক চন্দ্র মণ্ডল, ক্যামেলিয়া চৌধুরী ও রেজাউল আলম প্রমুখ।
গোলটেবিল বৈঠকে সুজন নির্বাহী সদস্য ড. তোফায়েল আহমদ-এর অনুপস্থিতিতে তাঁর পক্ষ থেকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ‘২০০৭ থেকে ০১৪-সাত সাতটি বছর। তারও পাঁচ বছর আগে হয়েছিলো একক ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাধারণ নির্বাচন। ২০১১ সালে এক ঢাকা দুই কর্পোরেশনে বিভক্ত হলো। কিন্তু এরপর চার বছর পেরিয়ে গেলেও হয়নি নির্বাচন।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকায় এখন প্রায় ৪০ লাখ ভোটার, কোটির অধিক লোক। নির্বাচনের প্রতি কারো কোন ঝোঁক আছে বলে মনে হয় না। অথচ সংবিধান, আদালতের রায়, গণতন্ত্রের নীতি-নিয়ম সবই নির্বাচনের পক্ষে।’ এ সময় তিনি সরকারের কাছে জানতে জান ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন আর কত দূর?
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, ‘জেলা পরিষদ বাংলাদেশের শুধু নয়, উপমহাদেশের ইতিহাসে একটি অত্যন- গৌরবোজ্জ্বল স্থানীয় সরকার। কিন্তু স্বাধীনতার পর বানরের পিঠা ভাগের সংকীর্ণ রাজনীতি এবং আমলাতন্ত্রের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের বলি হয় জেলা পরিষদ। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো ‘শর্টকার্ট’ পদ্ধতিতে পদ লাভ এবং দলীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে জেলাকে নিয়ে নানা অসংবিধানিক খেলায় মেতে ওঠে।’
প্রবন্ধে বলা হয়, ‘বর্তমানে জেলার সাধারণ প্রশাসনের কর্মপরিধি ও কর্মপ্রকৃতিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। বিশেষত বস্তুগত ও তথ্য প্রযুক্তির আধুনিকায়নের কারণে পূর্বতন ‘বিভাগ’ পদ্ধতির ধারাবাহিকতাও সময়ের নিরিখে অপচয়ী, অপ্রয়োজনীয় ও বাড়তি হিসেবে প্রতীয়মান। এ ক্ষেত্রে দেশের প্রতিটি জেলার অবকাঠামো, পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুকূল থাকা সত্ত্বেও পূর্ণাঙ্গ জেলা পরিষদ গঠিত না হওয়ার কোন কারণ নেই। ভারতেও জেলা পরিষদ বেশ ভালোভাবেই কাজ করছে। বর্তমানে ‘জেলা পরিষদ আইন, ২০০০’-এর ধারা ৮২ বলে জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসক নিয়োগ একটি স্বল্পকালীন অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হতে পারে, কিন’ এ ব্যবস্থাই যেন পাকাপোক্ত ব্যবস্থা। এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে সংবিধানের দরকার কী?’
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণ এবং সুস্থির ও সূদুরপ্রসারী প্রচেষ্টা হিসেবে প্রয়োজন বিভাগ ও জেলার প্রশাসনিক সংস্কার। প্রয়োজন নির্বাচিত ও সত্যিকারের জনপ্রতিনিধিত্বশীল একটি জেলা পরিষদ এবং দেশের রাজধানী শহর ঢাকার সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান। এ বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সক্রিয় চিন্তাভাবনা প্রয়োজন। প্রয়োজন ব্যাপক আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে সময়োপযোগী একটি জেলা পরিষদ আইন প্রণয়ন এবং তা নির্বাচনের পূবেই।’
জনাব এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘বহুদিন ধরে নির্বাচন না হওয়ায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বাসিন্দা হিসেবে আমরা সবাই ভুক্তভোগী। রাস্তাঘাটের যে অবস্থা জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,“একদিনের জন্য এ দেশে অনির্বাচিত সরকার থাকবে না” তাহলে আমার প্রশ্ন স্থানীয় সরকারে কেন অনির্বাচিত সরকার থাকবে? – যা কাম্য নয়, যা কাঙ্খিত নয়। এছাড়াও হঠাৎ করেই ঢাকা সিটিকে দুভাগে বিভক্ত করা হয়েছে কোন আলাপ-অলোচনা ছাড়াই। সরকারের যদি সদিচ্ছা থাকে তাহলে নির্বাচনের জন্য কোন সময় লাগবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সীমানা পুনর্বিন্যাসের কথা বলে এ নির্বাচনকে দেরি করা হচ্ছে। আমরা যদি ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করে সংসদীয় নির্বাচন করতে পারি তবে কেন ডিসিসি নির্বাচন করতে পারবো না? তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, “আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হইবে।” অর্থাৎ প্রশাসনের প্রত্যেক স্তরে নির্বাচিত স্থানীয় সরকার কাঠামো থাকা সাংবিধানিকভাবে বাধ্যতামূলক। জেলায় যদি নির্বাচিত জেলা পরিষদ না থাকে তবে সংবিধান বদলাতে হবে আমাদের। কেননা স্বাধীন বাংলাদেশে আজও জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়নি। অর্থাৎ সকল সরকারই সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। শুধু সংবিধানই নয় এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনাও রয়েছে। আমরা সে নির্দেশও অমান্য করেছি।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘তাহলে এ রাষ্ট্র কার স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে, নাগরিকের স্বার্থে না কি অন্য কারো স্বার্থে?।’

বিচারপতি কাজী এবাদুল হক বলেন, ‘দেশের স্বার্থে প্রত্যেকটি স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় যাতে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কাজ করতে পারে সে ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। শুধু তাই নয় সকল স্তরের বন্ধ করতে হবে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ।’

জনাব আলী ইমাম মজুমদার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের দেশে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে পারে না, তারপরেও আমরা নির্বাচন চাই ও গণতন্ত্র চাই। নির্বাচিত জেলা পরিষদ সবাই চায়, আমরাও চাই। আমরা নির্বাচন চাচ্ছি কিন’ এসকল পরিষদের কাজ কী হবে তা সুস্পষ্ট ও সুনিদিষ্ট করে দেওয়া উচিৎ।’ তিনি সরকারকে পিছু না হঠে দ্রুত নির্বাচন দেবার আহ্বান জানান।
জনাব এএসএম আকরাম বলেন, ‘সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত বলেই আজ দেশের এই অবস্থা। সংসদ সদস্যদের প্রধান কাজ আইন প্রণয়ন করা, সাংসদরা বর্তমানে আইন পাশের সময় হ্যাঁ বা না বলা ছাড়া কোন কাজ করেন না। আইন এর খসড়া প্রস্তুত করেন আমলারা। আর তাই সংসদ সদস্যদের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নাক গলানো ছাড়া আর কোন কাজ নেই। প্রত্যেকটি স্তরের কাজ সুনির্দিষ্ট হওয়া উচিৎ।’
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘বর্তমান সরকারের মাঝে একধরনের নির্বাচনভীতি ও জনগণ ভীতি কাজ করছে। সরকার নির্বাচন দিতে ইচ্ছুক না, কেননা তারা জানে যে, এসকল নির্বাচনে তারা জয়ী হতে পারবে না।’ তবে স্থানীয় সরকার বিশেষত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও জেলা পরিষদের বর্তমান যে অবস্থা তা সংবিধান বিরোধী ও মানবাধিকার বিরোধী বলে তিনি মন্তব্য করেন। আর তিনি সকলকে এ ইস্যুতে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান।

Related Post

“একতরফা বিতর্কিত নির্বাচন থেকে বিলম্বিত সুষ্ঠু ও অর্থবহ নির্বাচনই শ্রেয়”“একতরফা বিতর্কিত নির্বাচন থেকে বিলম্বিত সুষ্ঠু ও অর্থবহ নির্বাচনই শ্রেয়”

গত ১৩ ডিসেম্বর, ২০০৬ সকাল ৯.৩০টায় ‘সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক’-এর উদ্যোগে সিরডাপ মিলনায়তনে “চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের উপায়: কার কী করণীয়” শীর্ষক একটি গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সুজনের সভাপতি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ

হলমার্ক জালিয়াতি রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নেরই প্রতিফলন – গোলটেবিল বৈঠকে বক্তাগণহলমার্ক জালিয়াতি রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নেরই প্রতিফলন – গোলটেবিল বৈঠকে বক্তাগণ

হলমার্ক জালিয়াতি রাজনৈতিক দুবৃর্ত্তায়নেরই প্রতিফলন সুজনের গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।  গত ৭ অক্টোবর ২০১২, সকাল ১০ টায়,জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে, হলমার্ক জালিয়াতি,রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক এবং ব্যাংকিং খাতের

সরকারের সামপ্রতিক সিদ্ধান্ত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে কবর দেওয়ার শামিল-গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারাসরকারের সামপ্রতিক সিদ্ধান্ত স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে কবর দেওয়ার শামিল-গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

গত ২৯ wW‡m¤^i ২০১১, সকাল ১০.৩০টায়, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে, সুজনের উদ্যোগে স্থানীয় সরকার বিষয়ে সামপ্রতিক সরকারি সিদ্ধান্ত ও নাগরিক ভাবনা শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সুজন সহ-সভাপতি